যে কারণে ইরাকের জনপ্রিয় হাশদ আশ শাবির প্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল ওয়াশিংটন
অনলাইন ডেস্ক – মার্কিন অর্থ-মন্ত্রণালয় ইরাকের জনপ্রিয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাশদ আশ শাবির প্রধান ফালাহ আল ফাইজকে নিষেধাজ্ঞা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। মানবাধিকার বিষয়ে বেশ কিছু ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে মার্কিন সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মার্কিন অর্থ-মন্ত্রণালয়ের এ পদক্ষেপ কয়েকটি কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মার্কিন সরকার অন্য দেশের মর্যাদা ও সার্বভৌমত্বকে সবসময় খাটো করে দেখার চেষ্টা করে। ফালাহ আল ফাইজ হচ্ছেন এমন এক ব্যক্তি যিনি এর আগে ইরাকের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন এবং এখন তিনি হাশদ আশ শাবির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৬ সালে ইরাকের পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব পাশ হয় যেখানে হাশদ আশ শাবির সঙ্গে যুক্ত যে কোনো ব্যক্তিকে দেশের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণ্য করার কথা বলা হয়েছে। সেই হিসাবে মার্কিন সরকারের এ পদক্ষেপ ইরাকের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন।
ইরাকের বহু কর্মকর্তা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ওয়াশিংটনের এ পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ইরাকের ইসলামি বিপ্লবী উচ্চ পরিষদ বা সাইরির প্রধান শেইখ হামাম হামুদি এক বিবৃতিতে বলেছেন, মার্কিন অর্থ-মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত ইরাক এবং জনপ্রিয় সংগঠন হাশদ আশ শাবির বিরুদ্ধে আগ্রাসন এবং এটা ইরাকের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত।
হাশদ আশ শাবির প্রধানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আরেকটি বার্তা হচ্ছে তারা এর মাধ্যমে ইরাকের বিচারবিভাগকেও অবজ্ঞা ও অসম্মান করেছে। গত বৃহস্পতিবার ইরাকের আদালত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। জেনারেল সোলাইমানি ও আবু মাহদি আল মোহান্দেসকে হত্যার অপরাধে আদালত ওই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। ইরাকের আদালতের এ ঘোষণার ঠিক একদিন পর মার্কিন সরকার হাশদ আশ শাবির প্রধানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিল। অর্থাৎ ইরাকের বিচার বিভাগের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এ ভাবে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখালো মার্কিন সরকার।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মার্কিন এ পদক্ষেপের পেছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। প্রথমত, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল বিরোধী ইসলামি প্রতিরোধশক্তির ওপর যুক্তরাষ্ট্র খুবই খেপা। এ কারণে মার্কিন সরকার হাশদ আশ শাবির প্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল। বলা যায় মার্কিন সরকার এ অঞ্চলের ইসলামি প্রতিরোধ শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, হত্যা কিংবা তাদেরকে সন্ত্রাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কৌশল নিয়েছে। এই নীতির অংশ হিসেবে গত বছর ৩ জানুয়ারিতে তারা ইরানের কাসেম সোলাইমানি ও ইরাকের আবু মাহদি আল মোহান্দেসকে হত্যা করে। তাই মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ইরাকের হাশদ আশ শাবির প্রধানকে যে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে তাকে কেবলমাত্র ইরাকের বিষয় হিসেবে ধরলে হবে না বরং এটা আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র সমগ্র এ অঞ্চলের প্রতিরোধ শক্তিকে নির্মূল করতে চায়। তারই অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
ইরাকের হাশদ আশ শাবির প্রধানকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আরেকটি কারণ হচ্ছে ২০১৬ সালের নভেম্বরে এই সংগঠনের সামরিক শাখাকে ইরাকের জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হলে ওয়াশিংটন খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছিল। কারণ হাশদ আশ শাবি হচ্ছে চরম ইসরাইল ও মার্কিন বিরোধী এবং তারা ইরাক থেকে মার্কিন সেনা বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে আসছে। তারা ইরাকের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আমেরিকার আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের ধারণা এভাবে প্রতিরোধ শক্তিগুলোকে দুর্বল করতে পারলে ইরাকে মার্কিন সেনা মোতায়েন রাখা সম্ভব হবে। তাই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ওয়াশিংটন ইরাকের প্রতিরোধ শক্তিকে সতর্ক করে দিল।
তবে ইরাকে জনমত ক্রমেই মার্কিন বিরোধী হয়ে ওঠায় আমেরিকার এসব ষড়যন্ত্র কাজে লাগবে না বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
পার্সটুডে
