কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের চিরচেনা শিমুল গাছ এখন অস্তিত্ব সংকটে
মশিউর রহমান সেলিম, লাকসাম : বসন্ত এসে গেছে, পোকা-মাকড় ও পাখিরা এতে সুযোগ নিলো, গাছে গাছে ফুল-পাপড়িগুলো নিজেকে খুলে দিলো, অমৃত সুধাময়ী ওইসব প্রকৃতির জীবগুলো বসন্তের এই দিনে ব্যস্ত তার গন্ধপানে। তবে কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের লাকসাম, লালমাই, বরুড়া, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক ভাবে তুলা উৎপাদনের একমাত্র অবলম্বন সকলের চিরচেনা শিমুল গাছ। ওই শিমুল কিংবা তুলা গাছ এলাকার মানুষের কাছে এখন যেন অস্তিত্ব সংকটে।
জেলা দক্ষিনাঞ্চলের গাছ ব্যবসায়ীদের একাধিক সূত্র জানায়, এ অঞ্চলে একটা সময় বসত বাড়ীর আঙ্গিনায় এবং সড়কের দু’পাশে অসংখ্য শিমুল গাছ দেখা যেতো। বাংলা বছরের মাঘ-ফালগুন মাসে শিমুল গাছ জুড়ে লাল কিংবা গোলাপী রংয়ের ফুল জানান দিতো বসন্তের আগাম বার্তায় কোন বাড়ীতে শিমুল গাছ আছে। অথচ বৃহৎ ও মনোরম সৌন্দর্যের এ শিমুল গাছ ২/৪ টি গ্রাম ঘুরলেও এখন আর তেমন কারো চোখে পড়ে না।
সূত্রটি আরও জানায়, কালের আর্বতে রক্তচূড়া নামে সেই শিমুল গাছ অতীতে গ্রামীন ঐতিহ্য বহন করলেও সময়ের বিচারে অনেকটাই আজ হারিয়ে গেছে। শিমুল গাছটি তুলা উৎপাদন ছাড়াও ফুল ও ফল নিয়ে একটা সময় সাহিত্য চর্চা হতো। ওই গাছের শিকড় এবং বাকল বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসাবে প্রাচীন কাল থেকেই ব্যবহার, তকতা ও কাঠ দিয়ে অবকাঠামো তৈরীর সরঞ্জাম, হার্ডবোর্ড এবং দেয়াশলাই তৈরীর কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার হতো। অথচ ওই মূল্যবান গাছটি রক্ষনা-বেক্ষনে জেলা-উপজেলা কৃষি ও বন বিভাগ কোন গুরুত্বই দিচ্ছে না।
স্থানীয় পরিবেশবিদদের একাধিক সূত্র জানায়, একটা সময় ওই শিমুল গাছের ছায়ায় পথচারিরা বিশ্রাম নিতো, গ্রাম্য খেলাধুলাসহ বৈশাখী মেলা আয়োজন ছিলো দেখার মত। অথচ ওই গাছটি আজ নানাহ কারনে বিলুপ্তির পথে। মূলতঃ ওই গাছটি প্রাকৃতিক ভাবেই বাড়ীর আঙ্গিনা ও পরিত্যাক্ত ভূমিতে অনাদরে বেড়ে উঠে ২/৩ বছরের মধ্যে ফুল ও ফল ধরে কিন্তু কেউ এ গাছটিকে বানিজ্যিক ভাবে রোপন করে না। ফলে এক দিকে মানুষ শীতকালে লেপ-তোষক, আর বালিশ বানাতে মান সম্মত তুলার সংকটে এখন গার্মেন্টস জুট বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করছে এবং শিমুল গাছ বিলুপ্তিতে এলাকার পরিবেশ ও ভারসাম্য রক্ষার ঝুঁকিতে পড়েছে মানুষ। স্থানীয় কৃষি ও বন বিভাগ একটু আন্তরিক হলে শিমুল গাছ রোপন ও বিপনন করতে স্থানীয় কৃষকরা আগ্রহ দেখাতো এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সহযোগিতায় এগিয়ে আসলে শিমুল গাছ চাষে অনেকটা লাভবান হতো এলাকার মানুষ।
এ ব্যাপারে জেলা-উপজেলা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কর্মকর্তাদের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
