ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে জি-২০ জোটের বৈঠকে তীব্র মতবিরোধ: ব্যর্থতার দায়ভার কার?


ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি-২০ জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তীব্র মতবিরোধে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। যার জেরে এর আগে ব্যাঙ্গালুরুর জি-২০ অর্থমন্ত্রীদের সম্মেলনের মতো দিল্লির এই সম্মেলনেও কোনও যৌথ বিবৃতি আসছে না বলে জানিয়েছে আয়োজক দেশ ভারত।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর একবছর পর এই সম্মেলনেই প্রথম মুখোমুখি বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে একে অপরকে সমালোচনা করে বক্তব্যও দিয়েছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, তার ভাষায় ইউক্রেনে বিনা উস্কানিতে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং অন্যায় যুদ্ধের কারণে বৈঠকের আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। ওদিকে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে ‘ব্ল্যাকমেইল এবং হুমকি' সৃষ্টির অভিযোগ করেছেন। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো নিরপেক্ষ দেশগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে, যাতে তারা ইউক্রেনে যুদ্ধের নিন্দা জানায়।

ভারত জানায়, তারা ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে আলোচনাকে অন্যদিকে ফেরাতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর নানা সমস্যার উপর আলোকপাত করতে চেয়েছিল। কিন্তু  তারপরও ইউক্রেন নিয়ে বাকবিতণ্ডা থামানো যায়নি।  

বর্তমানে জি-২০ জোটের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে আছে ভারত। গত সপ্তাহে দেশটিতে হয়ে গেলো জি২০ জোটের অর্থমন্ত্রীদের সম্মেলন যেখানে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন নেতারা।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, জ্বালানী বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তার দেশ এখন আর পাশ্চাত্যের ওপর নির্ভরশীল নয়। তিনি আরো বলেছেন, মস্কোর নয়া জ্বালানী নীতি প্রাচ্যের দেশগুলোকে ঘিরে বিশেষ কর চীন ও ভারতকে ঘিরে আবর্তিত হবে। তিনি বলেন, “আমরা আর আমাদের পশ্চিমা শরিকদের ওপর নির্ভর করব না। আমরা তাদেরকে আর আমাদের পাইপলাইন উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ দেব না।' রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, “রাশিয়ার জ্বালানী নীতি এখন নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য শরিকদের ঘিরে আবর্তিত হবে। ভারত ও চীন সেরকমই দু'টি শরিক দেশ।'

যাইহোক, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জি-২০ জোটের সম্মেলনের আলোচনায় ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সরাসরি কোনও কথাই বলেননি। বরং গত কয়েক বছরের অর্থনৈতিক সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারী, সন্ত্রাসবাদ, মানবিক সহায়তার মতো বিষয়গুলোতে আলোকপাত করে সম্মেলনের অধিবেশন শুরু করেন তিনি।

বৃহস্পতিবারের আলোচনার পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর চেয়ারম্যান হিসাবে বৈঠকের সারসংক্ষেপ পেশ করেন যার মানে হচ্ছে, বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা যৌথ বিবৃতিতে পৌঁছতে পারেনি। ফলে মার্কিন একগুয়েমি ও স্বেচ্ছাচারী নীতির কারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ের এ বৈঠক ব্যর্থ হয়েছে বলেই পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।

প্রকৃতপক্ষে, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে পাশ্চাত্যের দেশগুলোর স্বেচ্ছাচারী ও অসহযোগিতামূলক আচরণের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে জি-২০ সম্মেলনের ওপর।  আবহাওয়া পরিবর্তন ও নিরাপত্তাহীনতাসহ বিশ্বের বহু সমস্যা ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চাপা পড়ে গেছে। এসব সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে আমেরিকা ইউক্রেন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমাজের সমর্থন লাভের দিকে মনোনিবেশ করায় সম্মেলন কার্যত ব্যর্থ হয়ে গেছে। 
খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২৩/একে

news