নিউ ইয়র্ক সিটির নতুন মেয়র জোরান মামদানি এখন যেন পুরো আমেরিকার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর জনপ্রিয়তা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অনেকেই বলছেন—এই তরুণ রাজনীতিকই হতে পারেন আমেরিকার ভবিষ্যৎ নেতা, এমনকি কেউ কেউ তাঁকে সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট হিসেবেও কল্পনা করছেন।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে নিউ ইয়র্ক সিটি নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ার পর মামদানির জনপ্রিয়তা শুধু মুসলিম সমাজেই নয়, সাধারণ শ্রমজীবী আমেরিকানদের মধ্যেও তুঙ্গে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী শহর নিউ ইয়র্কে তাঁর এই জয় ডেমোক্র্যাটিক রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—তিনি কি সত্যিই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন?

রাজনৈতিক যোগ্যতা ও পথচলা

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে হলে প্রার্থীদের দুটি ধাপ পেরোতে হয়—একটি সাংবিধানিক, অন্যটি রাজনৈতিক।
রাজনৈতিকভাবে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের সাধারণত রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পেতে হয়, যা আসে প্রাইমারি ইলেকশন বা পার্টি কনভেনশনের মাধ্যমে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প, বারাক ওবামা, জর্জ ডব্লিউ বুশ—সবারই এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে হয়েছে।
জোরান মামদানি ইতোমধ্যেই নিউ ইয়র্কে যে বিপুল সমর্থন পেয়েছেন, তা দেখেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তিনি সহজেই রাজনৈতিক এই ধাপগুলো অতিক্রম করতে পারবেন।

সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা

আমেরিকার সংবিধানের আর্টিকেল টু, সেকশন ওয়ানে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের জন্য তিনটি মৌলিক শর্ত উল্লেখ আছে—

১️⃣ প্রার্থীকে জন্মসূত্রে আমেরিকার নাগরিক হতে হবে। অর্থাৎ অন্য কোনো দেশে জন্মগ্রহণ করে পরে নাগরিকত্ব পেলে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে অযোগ্য।
২️⃣ প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ৩৫ বছর হতে হবে।
৩️⃣ প্রার্থীকে কমপক্ষে ১৪ বছর আমেরিকায় বসবাসের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

এই তিনটির যেকোনো একটি পূরণ না হলে প্রার্থী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

মামদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্যতা

এখন দেখা যাক, জোরান মামদানি এই শর্তগুলো কতটা পূরণ করেন।
প্রথম শর্তে বলা হয়েছে, জন্মসূত্রে আমেরিকান হতে হবে—এই শর্তটি পূরণ করতে পারেন না মামদানি।
কারণ, তাঁর জন্ম উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায়, যেখানে তাঁর বাবা কাজ করতেন।

দ্বিতীয় শর্ত অনুযায়ী, প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ৩৫ হতে হবে। বর্তমানে মামদানির বয়স ৩৪ বছর।
আগামী চার বছর নিউ ইয়র্কের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে তাঁর বয়স হবে ৩৮, অর্থাৎ বয়সের শর্ত পূরণ করবেন তিনি।

তৃতীয় শর্ত, আমেরিকায় অন্তত ১৪ বছর বসবাসের অভিজ্ঞতা থাকা—এই দিক থেকে তিনি ইতোমধ্যে যোগ্য।

তবে সবচেয়ে বড় বাধা সেই প্রথম শর্ত—জন্মসূত্রে নাগরিক না হওয়া। এই কারণেই বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

সংবিধান সংশোধনের সম্ভাবনা

তাত্ত্বিকভাবে, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে এই শর্ত বাতিল করা সম্ভব।
কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন কংগ্রেসের দুই কক্ষের তিন ভাগের দুই ভাগ সমর্থন, এবং যুক্তরাষ্ট্রের দুই-তৃতীয়াংশ অঙ্গরাজ্যের অনুমোদন—যা অত্যন্ত কঠিন ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া।

তবুও, অনেকেই মনে করছেন, যদি কখনও সেই সুযোগ তৈরি হয়, জোরান মামদানি নিঃসন্দেহে হবেন আমেরিকার অন্যতম শক্তিশালী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।

 

news