আফগানিস্তানে প্রতি ১০টা পরিবারের ৯টাই এখন খাবারের অভাব বা ঋণের ভারে জর্জরিত। বুধবার (১২ নভেম্বর) জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপি’র এক রিপোর্টে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়েছে। বিশেষ করে দরিদ্র পূর্ব আর উত্তরাঞ্চলে ফিরে আসা লাখো শরণার্থীর চাপে দেশের অর্থনীতি একদম বিপর্যস্ত। কাতার থেকে আল জাজিরা এ খবর দিয়েছে।
রিপোর্ট বলছে, ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৫ লাখ আফগান নিজের দেশে ফিরেছে।

তালেবান শাসিত আফগানিস্তান ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক সাহায্য কমা, নিষেধাজ্ঞা আর বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধুঁকছে। এর মধ্যে এ বছর পাকিস্তান আর ইরান জোর করে ১৫ লাখকে ফেরত পাঠিয়েছে। ফিরে আসা আফগানরা ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় পড়েছে। ফেরত পরিবারের অর্ধেকের বেশি খাবার জোগাতে চিকিৎসা ছাড়ছে, ৯০% এর বেশি পরিবার ঋণের ফাঁদে।

রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, এসব পরিবারের গড় ঋণ ৩৭৩ থেকে ৯০০ ডলার, অথচ মাসিক আয় মাত্র ১০০ ডলার। ৪৮ হাজারের বেশি পরিবারের জরিপ থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
ফেরত লোকজন বাড়ি-ঘরের সমস্যায়ও ভুগছে। ভাড়া তিনগুণ বেড়েছে। অর্ধেকের বেশি বলেছে, তাদের যথেষ্ট জায়গা বা বিছানা নেই। গত এক বছরে ১৮% মানুষ দ্বিতীয়বার বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

রিপোর্ট বলছে, আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের ইনজিল আর গুজারা জেলায় ফেরত শরণার্থীরা বেশিরভাগ তাঁবু বা ভাঙা ঘরে থাকছে।
ইউএনডিপি বলেছে, তাড়াতাড়ি সাহায্য না পেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। আফগানিস্তানে সংস্থার আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফেন রদ্রিগেস বলেন, আঞ্চলিকভাবে আয়, বাসস্থান আর সামাজিক ঐক্য বাড়ালে ফেরত এলাকার চাপ কমানো যাবে।
দীর্ঘ যুদ্ধ, ২০২১-এ যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার আর তারপরের মানবিক সংকটের পর আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক সাহায্য অনেক কমে গেছে। জাতিসংঘ এ বছর ৩.১ বিলিয়ন ডলার চেয়েছিল, দাতারা পূরণ করতে পারেনি।

তালেবান সরকার এ বছরের ভূমিকম্পের পর আন্তর্জাতিক সাহায্য চেয়েছে আর পাকিস্তানের শরণার্থী বহিষ্কার নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে।
ইউএনডিপি আরও সতর্ক করেছে, নারীদের কাজের সুযোগ কমায় পরিবারের দুর্দশা বেড়েছে। দেশে নারীদের শ্রমবাজারে অংশ মাত্র ৬%, যা বিশ্বের সবচেয়ে কম। নারীদের চলাচলে কড়া বাধার কারণে নারীপ্রধান পরিবারগুলোর কাজ, শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া প্রায় অসম্ভব।

জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব ও এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলের ইউএনডিপি’র আঞ্চলিক পরিচালক কানি উইগ্নারাজা বলেন, “কিছু প্রদেশে প্রতি চার পরিবারের একটিতে নারীই মূল উপার্জনকারী। তাই নারীদের কাজ থেকে বিরত রাখলে পুরো সমাজের ক্ষতি।”
তিনি আরও বলেন, “নারীদের মানবিক কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া মানে, সবচেয়ে বিপদে থাকা মানুষ—বিশেষ করে ফেরত শরণার্থী ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের—সাহায্য থেকে বঞ্চিত করা।”

 

news