ঢাকা, বুধবার, এপ্রিল ১৭, ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১
Logo
logo
ঘটনার প্রায় দুই বছর পর রহস্য উদঘাটন করল পিবিআই

খুন করে খুনিরাই লাশ হাসপাতালে নিয়ে যায়, আলোচিত রিয়াজ হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৩


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ০৮ জুন, ২০২২, ০৯:০৬ পিএম

খুন করে খুনিরাই লাশ হাসপাতালে নিয়ে যায়, আলোচিত রিয়াজ হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৩

ঘটনার প্রায় দুই বছর পর গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানাধীন ফুলদী সাকিনস্থ বিলের মধ্যে বহুল আলোচিত ছাইফ এগ্রোফার্মের কর্মচারী রিয়াজ উদ্দিন হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতার করেছে গাজীপুর পিবিআই। 

ডিসিস্ট রিয়াজ উদ্দিন (৩৫), পিতা-মোঃ নাজিম উদ্দিন,সাং-জামালপুর (হাজীপাড়া), থানা-কালীগঞ্জ, জেলা-গাজীপুর কালিগঞ্জ থানাধীন ফুলদি সাকিনস্থ ছাইফ এগ্রোফার্মের রাখাল হিসেবে কাজ করত। গত ইং-২৮/০৬/২০২০ তারিখ বিকাল অনুমান ০৪.০০ ঘটিকার সময় উক্ত ফার্ম সংলগ্ন বিলের মধ্যে হাঁস আনার জন্য গেলে রিয়াজ উদ্দিন সাঁতার কাটা অবস্থায় পানিতে ডুবে মারা যায়। পানি থেকে সহকর্মীরা ভিকটিমকে বিলের পানির মধ্যে থেকে উঠিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কালীগঞ্জ নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক রিয়াজ উদ্দিনকে মৃত ঘোষনা করেন। এঘটনায় কালিগঞ্জ থানায় অপমৃত্যু মামলা নং-২০, তারিখ-২০ জুলাই ২০২০ রুজু হয়। ময়না তদন্ত শেষে চিকিৎসকগণ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করেন যে, মাথায় আঘাতের কারণে রিয়াজ উদ্দিন মারা যায়। পরবর্তীতে ভিকটিম রিয়াজ উদ্দিনের পিতা-মোঃ নাজিম উদ্দিন,সাং-জামালপুর (হাজীপাড়া), থানা-কালীগঞ্জ, জেলা-গাজীপুর বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে  কালিগঞ্জ থানার মামলা নং-১৪, তারিখ-১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড আইনে একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে কালিগঞ্জ থানা পুলিশ মামলাটির তদন্ত শুরু করে। প্রায় ৩ মাস তদন্ত শেষে চুড়ান্ত রিপোর্ট বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করলে বিজ্ঞ আদালত স্বপ্রনোদিত হয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই গাজীপুর জেলাকে নির্দেশ প্রদান করেন। 

গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপারের হাওলা মতে কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ জামাল উদ্দিন বিধি মোতাবেক মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন এবং তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। এক পর্যায়ে পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদারের সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমানের সার্বিক সহযোগীতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে পিবিআই গাজীপুরের একটি চৌকস টিম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে গত ৬ জুন ২০২২ তারিখ দিবাগত রাত দেড়টার দিকে গাজীপুর জেলা কালীগঞ্জ থানাধীন ফুলদী এলাকা থেকে মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ১। মোঃ আজিজুল হক (২০), পিতা-মোঃ ফাইজ উদ্দিন মিয়া, মাতা-মোছাঃ ঝর্ণা বেগম,সাং-দক্ষিন পুরানপাড়া, থানা ও জেলা- নরসিংদী কে গ্রেফতার করে নিবিড় ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী আজিজুল হকের দেয়া স্বীকারোক্তি মতে একই তারিখ দিবাগত রাত  ৩টা ৫০ মিনিটে নরসিংদী সদর থানাধীন দক্ষিন পুরান পাড়া এলাকা হতে ঘটনার মূল আসামী ২। ইয়াছিন মিয়া (৩৯), পিতা-মোঃ হিরু মিয়া ওরফে ভাসানী, মাতা-মোছাঃ রোকেয়া বেগম, সাং-দক্ষিন পুরান পাড়া, থানা ও জেলা-নরসিংদীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত উভয় আসামীর স্বীকারোক্তি মোতাবেক ঘটনার সাথে জড়িত আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত শিশু ৩। মোঃ আবির (১৬), পিতা-মোঃ সফিকুল ইসলাম, মাতা-মোছাঃ আকলিমা বেগম, সাং-সৈয়দনগর, পোঃ সৈয়দনগর, থানা-শিবপুর, জেলা-নরসিংদী কেশিবপুর থানাধীন সৈয়দ নগর এলাকা থেকে ৭ জুন ২০২২ তারিখ ভোর ৫টার দিকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে অভিযান শেষে ৭ জুন ২০২২ তারিখ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পিবিআই গাজীপুর কার্যালয়ে হাজির  হয়। 

গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ ইয়াসিন মিয়া, মোঃ আজিজুল হক এবং মোঃ আবিরসহ ভিকটিম রিয়াজ উদ্দিন কালিগঞ্জ থানাধীন ফুলদী সাকিনস্থ ছাইফ এগ্রোফার্মে রাখাল হিসেবে কাজ করত। তাদের মধ্যে আসামী মোঃ ইয়াসিন মিয়া উক্ত ফার্মে দুধ বিক্রি থেকে শুরু করে ফার্মের যাবতীয় কাজ করত। আসামী মোঃ ইয়াসিন মিয়া দুধ বিক্রি থেকে শুরু করে ফার্মের যাবতীয় কাজকর্ম দেখাশুনার দায়িত্বে ছিল। মোঃ ইয়াছিন আলী প্রতিদিন ফুলদী বাজারে ছাইফ এগ্রোফার্মের দুধ বিক্রি করত। আসামী মোঃ ইয়াসিন মিয়া দুধ বিক্রির টাকা থেকে প্রতিদিন ১০০/১৫০ টাকা গোপনে রেখে দিত। আসামী মোঃ ইয়াসিন একদিন ভিকটিম রিয়াজ উদ্দিনকে নিয়ে দুধ বিক্রি করতে গেলে রিয়াজ উদ্দিন টাকা রাখার বিষয়টি জেনে যায়। তারপর থেকে রিয়াজ উদ্দিন আসামী মোঃ ইয়াসিন মিয়ার চুরি কৃত টাকার অর্ধেক ভাগ চায়। টাকার ভাগ না দিলে রিয়াজ উদ্দিন ফার্মের মালিককে জানিয়ে দিবে বলে ইয়াসিন মিয়াকে হুমকি দেয়। ঘটনার অনুমান ০২ দিন আগে এ নিয়ে রিয়াজ এর সাথে ইয়াসিনের ঝগড়া হয়। ঘটনার দিন দুপুরে গোসল করার সময় গ্রেফতারকৃত আসামীগন ভিকটিম রিয়াজ উদ্দিনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। তাদের পূর্ব পরিকল্পনা মতে ঘটনার দিন গত ২৮ জুন ২০২০ তারিখ আনুমাকি বিকাল ৪টার দিকে আসামী মোঃ ইয়াসিন মিয়াসহ অন্যান্য আসামীগন ভিকটিম রিয়াজ উদ্দিনকে সাথে নিয়ে বিলের মধ্যে হাঁস আনার জন্য যায়। অন্য দুইজন আসামী বিলের পাড়ে দাঁড়িয়ে পাহারা দেয়। কিছুদুর যাওয়ার পর আসামী মোঃ ইয়াসিন মিয়ার হাতে থাকা কাঠের লাঠি দিয়ে ভিকটিমের মাথায় ৩/৪টা বারি মারে ফলে ভিকটিম রিয়াজ উদ্দিন পানিতে ডুবে যায়। ইয়াসিন তার সহযোগী মোঃ আজিজুল ও মোঃ আবিরের কাছে ফিরে এসে তারা ৩ জন ফার্মে থাকা সিকিউরিটি গার্ড ও অন্যান্য লোকদের কাছে প্রচার করে যে রিয়াজ উদ্দিন পানিতে ডুবে গিয়াছে। পরবর্তীতে ঘটনায় জড়িত আসামী ইয়াসিন মিয়া ও অন্যান্য লোকজন বিলের পানিতে গিয়া ভিকটিম রিয়াজ উদ্দিনকে বিলের মধ্যে পানির নিচে হতে উদ্ধার করে। আসামী ইয়াসিন মিয়া ও আজিজুল হক কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিলে কর্তব্যরত ডাক্তার রিয়াজ উদ্দিনকে মৃত্যু ঘোষনা করেন। 
এ বিষয়ে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, দায়িত্ব পাওয়ায় আমরা দীর্ঘ অনুসন্ধান করি। এক পর্যায়ে গত ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামী ১। মোঃ আজিজুল হক (২০) কে গ্রেফতার করে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী আজিজুল হকের দেওয়া স্বীকারোক্তি মতে ঘটনার মূল আসামী ২। ইয়াছিন মিয়া (৩৯) কে গ্রেফতার করি। গ্রেফতারকৃত উভয় আসামীর স্বীকারোক্তি মোতাবেক ঘটনার সাথে জড়িত শিশু ৩। মোঃ আবির (১৬) কে পুলিশ হেফাজতে গ্রহণ করি। গ্রেফতারকৃতদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা অত্র মামলার ঘটনার সাথে জড়িত মর্মে প্রাথমিকভাবে স্বীকারোক্তি প্রদান করে।  অতঃপর বিধি মোতাবেক তাদেরকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হলে তারা বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।