এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর, ২০২৫, ০৬:১০ পিএম

দৈনিক এক্সপ্রেস ট্রিবিউন-এ প্রকাশিত বিশ্লেষণে পাকিস্তান-আফগান সম্পর্ক নিয়ে যে মূল শিক্ষা তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো দুই দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম শিক্ষা হচ্ছে — অন্য কোনো দেশের উস্কানিতে আঞ্চলিক বিষয়কে সামরিকভাবে সমাধান করা যাবে না; আফগানিস্তানে অথবা পাকিস্তানে কোনো তৃতীয় পক্ষের প্ররোচনায় আরেকটি দেশের ভূখণ্ডে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। আমেরিকা ও তার মিত্রদের পূর্বেকার অভিজ্ঞতা দেখায়, দখল বা সামরিক হস্তক্ষেপ ইতিহাসকে পুন লিখতে পারে না।
দ্বিতীয় শিক্ষা হলো—কূটনীতি ব্যর্থ হলে কেবল তখনই শক্তি ব্যবহার করা উচিত। কূটনীতিকে ব্যর্থ হতে দেয়া মানেই যুদ্ধের পথ প্রশস্ত করা। করাচির ডিএইচএ সুফা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলী এহসান এক বিশ্লেষণে বলেন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সাধারণভাবে যুদ্ধবিগ্রহে ডুবতে পারবে না — কারণ এই সংঘাত একেবারেই প্রকাশ্য ও ঘোষণা প্রণোদিত সাধারণ যুদ্ধের মতো হবে না। বরং এটি দুই দেশের ভেতরকার জটিলতা, সীমান্ত উদ্বেগ ও অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে গঠিত।
ড. এহসান দুইটি পশ্চিমা ধারনার ভুলের কথা স্মরণ করান—একটু উদার বিশ্বাস ছিল যে ইতিহাস মৃত এবং আন্তঃনির্ভরতা স্থায়ী; অন্যটা ছিল শক্তি প্রয়োগ করেই রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণ করা যায়। এই দুটিই আফগানিস্তানে কাজ করেনি। আফগানিস্তান ও ইরাকে আমেরিকার কঠোর পদক্ষেপ রাজনৈতিক ফল আনতে ব্যর্থ হয়েছে; ইরাক দীর্ঘ গৃহযুদ্ধে গেছে, আফগানিস্তানেও বুদ্ধিজীবি তৎপরতা ও অবাঞ্ছিত প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের কৌশল নির্ধারণের মূল প্রশ্ন—কূটনীতি না সামরিক পদক্ষেপ?—এর সঠিক উত্তর পাওয়া জরুরি। কেবল সামরিক অভিযানে মনোযোগ দিলে, কোন লক্ষ্য কেন্দ্র করে অভিযান চালানো হবে তা নির্ধারণ করা কঠিন হবে। কৌশলগতভাবে ‘মূলনীতি’ নির্ধারণ ছাড়া কোনো সামরিক পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদে সফল হতে পারে না; জনসমর্থন ও রাজনৈতিক ঐক্য প্রয়োজন।
ড. এহসান আমেরিকার ‘এশিয়ায় কেন্দ্রবিন্দু’ কৌশলকে উদাহরণ হিসেবে টেনে বলেন, কৌশল কেবল ভৌগোলিক নয় — তা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে সংযুক্ত। পাকিস্তানেরও আফগান নীতি স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা প্রয়োজন — কী রকম প্রচেষ্টা কেন্দ্রীয় হবে: কূটনৈতিক নাকি সামরিক? সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই ইসলামাবাদ তার রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার যোগ্য হবে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ-কে ব্যবহার করে সামরিক ও কূটনীতির মধ্যে সমন্বয় ঘটানো উচিত। যুক্তরাজ্য, আমেরিকা ও ফ্রান্সের মতো কাঠামো থাকলে পাকিস্তানও এই ধরনের ফোরাম প্রতিষ্ঠা করে সিদ্ধান্ত প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বেশি সফল হতে পারে।
সংক্ষেপে: আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক—এটি কেবল সীমান্তীয় সমস্যা নয়; এটি রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামাজিক এক জটিল চিত্র। তাই দ্রুত শক্তি প্রয়োগ না করে কূটনীতি ও সমন্বিত নীতির দিকে ধাওয়া করাই দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক পথ হতে পারে।