ঢাকা, রবিবার, নভেম্বর ২, ২০২৫ | ১৮ কার্তিক ১৪৩২
Logo
logo

রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করে ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন কিম জং উন


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ০১ নভেম্বর, ২০২৫, ০৩:১১ পিএম

রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করে ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন কিম জং উন

একসময় ‘ভালোবাসায় আবদ্ধ’ বলেছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। কিন্তু এখন সেই সম্পর্ক অতীত। ট্রাম্পের প্রকাশ্য আমন্ত্রণ সত্ত্বেও কিম এবার কোনো সাড়া দেননি। বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ছবি তোলার মতো প্রয়োজনীয়তা কিমের নেই। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এই তথ্য জানিয়েছে।

এশিয়া সফরের সময় ট্রাম্প একাধিকবার কিমের সঙ্গে সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এমনকি তিনি বলেন, “আমি ১০০ শতাংশ প্রস্তুত”, এবং উত্তর কোরিয়াকে “একধরনের পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র” হিসেবেও স্বীকার করেন—যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অবস্থানের পরিপন্থী।

কিন্তু পিয়ংইয়ং কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। বরং তারা একাধিক মিসাইল পরীক্ষা চালিয়েছে এবং তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে রাশিয়া ও বেলারুশ সফরে পাঠিয়েছে।

হার্ভার্ড এশিয়া সেন্টারের ভিজিটিং স্কলার সং-হিওন লি বলেন, “বাস্তবতা হলো, কিম জং উনের অংশগ্রহণের আগ্রহ জাগানোর মতো কিছুই ছিল না। এটি ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক ভুল।”

তিনি আরও বলেন, “ট্রাম্পের বারবার আহ্বান আসলে কিমের জন্য একধরনের ‘কূটনৈতিক জয়’, যা তার পারমাণবিক কর্মসূচিকে আরও বৈধতা দেয়।”

২০১৯ সালে ট্রাম্পের টুইটার আহ্বানের পর দুই নেতা শেষবার দেখা করেন দক্ষিণ কোরিয়া সীমান্তের পানমুনজমে। তবে হ্যানয়ে অনুষ্ঠিত নিরস্ত্রীকরণ ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আলোচনায় কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় উদ্যোগটি ব্যর্থ হয়।

এরপর উত্তর কোরিয়া নিজেকে “অপরিবর্তনীয় পারমাণবিক রাষ্ট্র” ঘোষণা করে এবং রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক আরও জোরদার করে। এমনকি ইউক্রেন যুদ্ধেও রাশিয়াকে অস্ত্রসহায়তা পাঠিয়েছে।

সাবেক সিআইএ বিশ্লেষক সু কিম বলেন, “রাশিয়ার সমর্থনই এখন উত্তর কোরিয়ার কৌশলগত শক্তিকে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে কিম এখন এমন অবস্থানে আছেন, যেখানে ট্রাম্পের আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দেওয়া তার জন্য সহজ।”

এদিকে উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছো সন হুই সম্প্রতি মস্কো সফরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের চুক্তি করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া থেকে পিয়ংইয়ং এখন অর্থনৈতিক সহায়তা, সামরিক প্রযুক্তি, খাদ্য ও জ্বালানি পাচ্ছে—যা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার চাপ অনেকটাই কমিয়ে দিচ্ছে।

চীনের সঙ্গেও উত্তর কোরিয়ার বাণিজ্য বেড়ে ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত মাসে বেইজিংয়ের সামরিক কুচকাওয়াজে শি জিনপিং ও পুতিনের পাশে কিমের উপস্থিতি তার আন্তর্জাতিক মর্যাদার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

হার্ভার্ডের সং-হিওন লি বলেন, “রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে এই নতুন কৌশলগত সম্পর্কের ফলে কিমের এখন ট্রাম্পের সঙ্গে ফটোসেশন করার কোনো প্রয়োজন নেই। বরং তিনি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্ত অবস্থানে আছেন।”

অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোরীয় অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ভ্লাদিমির টিখোনভ বলেন, “২০১৯ সালের হ্যানয় বৈঠকের ব্যর্থতার পর পিয়ংইয়ং এখন অনেক বেশি সতর্ক। তারা এখন স্পষ্ট প্রস্তাবের অপেক্ষায় আছে—যেমন কূটনৈতিক স্বীকৃতি বা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।”