ঢাকা, রবিবার, নভেম্বর ২, ২০২৫ | ১৮ কার্তিক ১৪৩২
Logo
logo

ভারতীয় পাসপোর্ট আবারও র‍্যাঙ্কিংয়ে নিচে! জানুন কেন কমছে বিশ্বে এর ক্ষমতা


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ০১ নভেম্বর, ২০২৫, ০৩:১১ পিএম

ভারতীয় পাসপোর্ট আবারও র‍্যাঙ্কিংয়ে নিচে! জানুন কেন কমছে বিশ্বে এর ক্ষমতা

বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ ভারত, বৈশ্বিক পরাশক্তি হওয়ার পথে ছুটছে—কিন্তু আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে দেশটির পাসপোর্ট যেন উল্টো দিকেই হাঁটছে। হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স ২০২5 অনুযায়ী, ভারতীয় পাসপোর্টের র‍্যাঙ্কিং গত বছরের তুলনায় ৫ ধাপ কমে এখন ৮৫তম স্থানে নেমে এসেছে।

অর্থনীতির দিক থেকে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম শক্তি হয়েও ভারতের পাসপোর্ট অবস্থান এমন যে, রুয়ান্ডা (৭৮তম), ঘানা (৭৪তম) এমনকি আজারবাইজানও (৭২তম) ভারতের চেয়ে এগিয়ে।

কোথায় দাঁড়িয়ে ভারতীয় পাসপোর্ট?

হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় নাগরিকরা এখন ৫৭টি দেশে ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছেন। অন্যদিকে, তালিকার শীর্ষে থাকা সিঙ্গাপুরের পাসপোর্টে ১৯৩টি দেশে, দক্ষিণ কোরিয়ার ১৯০টি এবং জাপানের ১৮৯টি দেশে প্রবেশ করা যায় ভিসা ছাড়াই।

তুলনামূলকভাবে ভারতের অবস্থান স্থবির। ২০১৫ সালে ভারতীয়রা ভিসা ছাড়াই ৫২টি দেশে যেতে পারতেন—সেই বছরও ভারতের অবস্থান ছিল ৮৫তম। এক দশক পর গন্তব্য বেড়েছে, কিন্তু র‍্যাঙ্কিং একই জায়গায়!

কেন কমছে ভারতের র‍্যাঙ্কিং?

বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মূল কারণ বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ প্রতিযোগিতার তীব্রতা। প্রতিটি দেশ এখন ভিসা-মুক্ত ভ্রমণ সুবিধা বাড়াতে একে অপরের সঙ্গে দ্রুত চুক্তি করছে।

হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের ২০২৫ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালে একজন ভ্রমণকারীর জন্য গড়ে ভিসা-মুক্ত দেশ ছিল ৫৮টি, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৯টিতে।

উদাহরণ হিসেবে চীনকে দেখা যায়—মাত্র এক দশকে তারা ভিসা-মুক্ত গন্তব্য ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৮২ করেছে, ফলে র‍্যাঙ্কিং ৯৪তম থেকে ৬০তম-এ উঠে এসেছে।

পাসপোর্টের শক্তি নির্ভর করে কীসের ওপর?

আর্মেনিয়ায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত অচল মালহোত্রা বলেন, “পাসপোর্টের শক্তি নির্ভর করে শুধু অর্থনীতি নয়, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপরও।”

তিনি মনে করিয়ে দেন, “১৯৭০-এর দশকে ভারতীয়রা বহু পশ্চিমা দেশে ভিসা ছাড়াই যেতেন। কিন্তু ১৯৮০-এর দশকে খালিস্তান আন্দোলন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা সেই বিশ্বাস নষ্ট করে দেয়।”

এছাড়া অনেক দেশ ভারতীয় অভিবাসীদের নিয়ে সতর্ক। কারণ অনেক ভারতীয় বিদেশে ভিসার মেয়াদ শেষে থেকেও যান, যা ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।

নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সমস্যাও দায়ী

২০২৪ সালে দিল্লি পুলিশ পাসপোর্ট জালিয়াতির অভিযোগে ২০৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পাশাপাশি ভারতের ধীরগতির ভিসা প্রক্রিয়া ও কঠিন অভিবাসন ব্যবস্থাও আন্তর্জাতিকভাবে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করছে।

যদিও সরকার সম্প্রতি ই-পাসপোর্ট চালু করেছে, যেখানে বায়োমেট্রিক চিপ ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পাশাপাশি আরও দ্বিপাক্ষিক ভ্রমণ চুক্তি ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যাতে ভারতীয় নাগরিকরা বিশ্বব্যাপী সহজে চলাচল করতে পারেন।

ভারতীয় নাগরিকদের ভ্রমণে এর প্রভাব

দুর্বল পাসপোর্ট মানে বেশি কাগজপত্র, উচ্চ ভিসা ফি, দীর্ঘ অপেক্ষা এবং সীমিত ভ্রমণ সুবিধা। এর ফলে ভারতের “সফট পাওয়ার” ও আন্তর্জাতিক প্রভাবও কমে যাচ্ছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি ভারত ভবিষ্যতে বৈশ্বিক প্রভাব বাড়াতে চায়, তবে পাসপোর্টের শক্তি বৃদ্ধিই হবে প্রথম পদক্ষেপ।