এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর, ২০২৫, ০৪:১১ পিএম

ভারতের রাজধানী এখন শোকে মুহ্যমান। সোমবার সন্ধ্যার ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন অনেক প্রাণ, আহতরা এখনো মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। পুরো দিল্লিতে নেমেছে আতঙ্কের কালো ছায়া।
এই শোকের মুহূর্তে দেশজুড়ে শোকের পরিবেশ, আর ঠিক তখনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিদেশে। মঙ্গলবার সকালে দু'দিনের ভুটান সফরে রওনা হয়েছেন তিনি। দেশের ভেতর যখন যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি, তখন প্রধানমন্ত্রীর এই সফর নিয়ে ছড়িয়েছে প্রচণ্ড বিতর্ক।
বিরোধীদের সরাসরি প্রশ্ন—এই ভয়াবহ সময়ে দেশের নেতা কোথায়? রাজধানী রক্তে ভেসে যাচ্ছে, অথচ প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে কেন?
আম আদমি পার্টির মুখপাত্র সৌরভ ভারদ্বাজের কড়া মন্তব্য, মোদি নিজেই তো বলেছিলেন—ভবিষ্যতে ভারতে কোনো জঙ্গি হামলা হলে তা যুদ্ধ অপরাধ। তাহলে এখন কি যুদ্ধ চলছে?
তিনি প্রশ্ন করেন, দিল্লির ঘটনা এত ভয়ঙ্কর, গোটা দেশ উদ্বিগ্ন। প্রধানমন্ত্রী কি চাইলে সফরটা থামিয়ে রাখতে পারতেন না? একই সুরে কংগ্রেসও। তারা বলছে, দিল্লির বিস্ফোরণের দায় এড়ানো যাবে না। কংগ্রেসের দাবি—স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে এখুনি পদত্যাগ করতে হবে।
দলের মুখপাত্র বলেন, দিল্লির বুকে এত বড় হামলার পরও সরকারের দায় কার? জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্ব যাদের, তারা কি ব্যর্থ হয়নি?
এদিকে ঘটনাস্থলে তদন্ত শুরু করেছে একাধিক সংস্থা। সূত্র বলছে, হামলার সঙ্গে পাকিস্তান-ঘনিষ্ঠ জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের যোগ আছে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, বিস্ফোরণের আগে সুনহেরি মসজিদের পার্কিংয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিল একটা সাদা গাড়ি—সেটাই পরে ফেটেছে।
এই সূত্র ধরে ইতিমধ্যে দু'জন সন্দেহভাজনকে ধরেছে নিরাপত্তা বাহিনী। প্রথম তদন্তেই বেরোচ্ছে সংগঠিত জঙ্গি নেটওয়ার্কের ইঙ্গিত। কিন্তু এত কড়া নিরাপত্তা থাকতে রাজধানীর কেন্দ্রে এভাবে হামলা হলো কী করে—এই প্রশ্ন তুলছে সাধারণ মানুষও।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যখন দেশজুড়ে নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্ক চরমে, তখন প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ যাওয়া মানুষের মনে বিভ্রান্তি আর রাগ জাগিয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সর্বত্র।
সমালোচকদের মতে, সরকারের উপরমহলে সমন্বয়ের অভাবই এই বিপর্যয়ের মূল কারণ। বিস্ফোরণের পরও গোয়েন্দা সতর্কতা বা তথ্যের অভাব নিয়ে চুপ সরকার।
প্রধানমন্ত্রী অবশ্য ভুটান থেকে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি খুব ভারী মনে এখানে এসেছি। দিল্লির ঘটনায় গোটা দেশ শোকাহত। আমি সারারাত তদন্তকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। ষড়যন্ত্রকারীরা কোনোভাবে বাঁচবে না।
কিন্তু বিরোধীরা বলছে, বিদেশ থেকে বার্তা পাঠানো যথেষ্ট নয়। দেশের ভেতরে থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই ছিল প্রধানমন্ত্রীর নৈতিক দায়িত্ব।
দেশের মানুষ এখন উত্তর খুঁজছে—কে করেছে দিল্লির এই হত্যাকাণ্ড? কেন বারবার রাজধানীর বুকেই হামলা? সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি কি শুধুই কথার কথা? নাকি কাগজে-কলমে আটকে আছে? দিল্লির এই মর্মান্তিক বিস্ফোরণ যেন সব প্রশ্নকেই আরও জোরে তুলে ধরেছে।
যখন রাজধানী রক্তাক্ত, নাগরিকরা শোকাহত-আতঙ্কিত, তখন প্রধানমন্ত্রী বিদেশে—এই ছবি এখন ভারতের রাজনৈতিক ও নৈতিক নেতৃত্বের দায়বোধ নিয়েই নতুন বিতর্ক জন্ম দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিস্ফোরণ শুধু গোয়েন্দা ব্যর্থতা নয়, সরকারের জনসংযোগেরও বড় পরীক্ষা। আর এই পরীক্ষায় শাসকশক্তি এখন কঠিন চাপে পড়েছে—তা আর লুকানো যাচ্ছে না।