এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর, ২০২৫, ০৩:১১ পিএম

জার্মান একনায়ক অ্যাডলফ হিটলার নিয়ে চাঞ্চল্যকর এক তথ্য ফাঁস হয়েছে, যা নিয়ে ইতিহাসবিদ আর বিজ্ঞানীদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ব্রিটিশ টেলিভিশন চ্যানেল চ্যানেল ৪-এর আসন্ন একটি ডকুমেন্টারিতে দাবি করা হচ্ছে, হিটলারের শরীরে একটি বিরল জিনগত সমস্যা ছিল, যার কারণে তার যৌনাঙ্গ ঠিক মতো বিকশিত হয়নি।
এই জিনগত বিকৃতির কারণে হিটলার যৌন সম্পর্কে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেননি এবং তিনি কখনও পুরোপুরি বয়োঃসন্ধি পারই করেননি বলে দাবি করা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় দাবি করছেন, হিটলারের ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা গেছে তিনি "কালম্যান সিনড্রোম" নামের একটি জিনগত রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বয়োঃসন্ধি সাধারণত অসম্পূর্ণ থাকে এবং তাদের যৌনাঙ্গের স্বাভাবিক বিকাশ ঘটে না। বিশ্লেষণে ইঙ্গিত মিলেছে যে হিটলারের ছিল 'মাইক্রো-পেনিস' বা অতি ক্ষুদ্র যৌনাঙ্গ।
এই শারীরিক সমস্যাটি তার মানসিক ও ব্যক্তিগত জীবনে এক গভীর ছাপ রেখে যায়। অনেক ইতিহাসবিদের ধারণা, এই জৈবিক অপূর্ণতাই তার জীবনের গভীর হতাশা, অসহ্য রাগ আর চরম উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্ম দিয়েছিল।
এই ডকুমেন্টারিতে আরও বলা হয়েছে, হিটলারের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে তার রক্তে ভেজা একটি সোফার কাপড় থেকে। ১৯৪৫ সালে আত্মহত্যার পর তার দেহাবশেষ থেকে এই রক্তের দাগ সংগ্রহ করা হয়েছিল। এই বিশ্লেষণটি পরিচালনা করেছেন বিখ্যাত জিনবিজ্ঞানী অধ্যাপক টুরি কিং, যিনি মন্তব্য করেন, "হিটলার যদি নিজের এই জিনগত ফলাফল নিজেই দেখতে পারতেন, তাহলে তিনি হয়তো নিজেকেই গ্যাস চেম্বারে পাঠিয়ে দিতেন।"
এই গবেষণা হিটলারের ডিএনএতে ইহুদি বংশগতি ছিল কিনা সে দীর্ঘদিনের বিতর্কেরও অবসান ঘটিয়েছে। গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন যে তার ডিএনএতে ইহুদি বংশোদ্ভূত কোনো জিনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, সে তত্ত্ব একেবারেই ভিত্তিহীন।
ডকুমেন্টারিতে অন্য একজন গবেষক উল্লেখ করেছেন যে হিটলারের যৌন অক্ষমতা এবং শারীরিক অপূর্ণতাই তার রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে আরও উসকে দিয়েছিল। যৌনজীবনে ব্যর্থ হলেও তিনি ক্ষমতার জোরে নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ করার এক অদম্য ইচ্ছা ধারণ করেছিলেন। বিশেষ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তার সহযোদ্ধারা প্রায়ই তার শারীরিক ত্রুটিকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করতেন—যা তার মনে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে। ২০১৫ সালে প্রকাশিত ১৯২৩ সালের একটি মেডিকেল রিপোর্টেও উল্লেখ ছিল যে হিটলারের একটি অণ্ডকোষ স্বাভাবিক অবস্থানে নামেনি।
ইতিহাসবিদ অ্যালেক্স জে কে, যিনি জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, তিনি বলেন, "অন্য সব নাৎসি নেতাদের স্ত্রী, সন্তান ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। কিন্তু হিটলারই ছিলেন একমাত্র, যিনি সম্পূর্ণরূপেই এই ধরনের কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে দূরে থাকতেন।" তার মতে, এই কারণেই "কেবলমাত্র হিটলারের নেতৃত্বেই নাৎসি আন্দোলন সত্যিকারের ক্ষমতায় উঠতে পেরেছিল।"
এছাড়াও, হিটলারের ডিএনএ বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে যে তিনি একাধিক মানসিক ও স্নায়বিক সমস্যায় ভুগতে পারেন। ডকুমেন্টারিতে বলা হয়েছে, তার জিনে অটিজম, সিজোফ্রেনিয়া এবং বাইপোলার ডিসঅর্ডারের প্রবণতা অনেক বেশি মাত্রায় ছিল। তবে, গবেষকরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারেননি যে বাস্তব জীবনে তিনি এই রোগগুলোর কোনোটিতেই ভুগছিলেন কিনা।
তবে বিজ্ঞানীরা স্পষ্টই সতর্ক করে দিয়েছেন যে এই তথ্যগুলোকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা উচিত নয়। ব্রিটিশ ইহুদি মনোবিজ্ঞানী সাইমন ব্যারন-কোহেন বলেন, "হিটলারের নৃশংসতা বা হিংস্রতাকে কোনো মানসিক অসুস্থতার সঙ্গে যুক্ত করা একেবারেই বিপজ্জনক। কারণ, এই রোগে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই কখনও হিংস্র হন না, বরং অনেকেই অত্যন্ত সহানুভূতিশীল হয়ে থাকেন।"