ঢাকা, রবিবার, ডিসেম্বর ৭, ২০২৫ | ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
Logo
logo

ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশ বৈধ কি না—দেখবে সুপ্রিম কোর্ট


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৫:১২ পিএম

ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশ বৈধ কি না—দেখবে সুপ্রিম কোর্ট

যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার নিয়ম কঠোর করতে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন, সেটি আদৌ বৈধ কি না—এবার তা খতিয়ে দেখবে সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার দেশটির সর্বোচ্চ আদালত এ বিষয়ে শুনানি নিতে রাজি হয়েছে।

ট্রাম্প জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পরদিনই অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা দম্পতিদের সন্তানদের নাগরিকত্ব বন্ধে এই আদেশে স্বাক্ষর করেন। তবে এরপর একের পর এক নিম্ন আদালত রায় দিয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত আটকে দেয়। এখন সুপ্রিম কোর্ট সেই রায়গুলোর বিরুদ্ধে বিচার বিভাগের আপিল গ্রহণ করেছে।

ট্রাম্পের নীতিতে কী বলা হয়েছিল

ট্রাম্প সরকারের আদেশে বলা হয়—যদি কোনো শিশুর মা–বাবা মার্কিন নাগরিক বা বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা না হন, তাহলে সেই শিশুকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না।

কিন্তু নিম্ন আদালত জানিয়ে দেয়—এ নীতি মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী এবং জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা ফেডারেল আইন—দুটিই লঙ্ঘন করছে।

এই নীতির কারণে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলো আদালতে মামলা করলে বিচারকেরা দ্রুতই আদেশটি বন্ধ রাখেন।

এখনো নির্ধারিত হয়নি শুনানির তারিখ

সুপ্রিম কোর্ট এখনো মামলাটির যুক্তিতর্কের কোনো তারিখ নির্ধারণ করেনি। বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে বলেই ধারণা।

ট্রাম্পের আদেশ ঘোষণার পরপরই তা ব্যাপক আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। বেশ কয়েকজন ফেডারেল বিচারক রায় দেন—এই পরিবর্তন সংবিধান বিরোধী। একই সময়ে দুটি ফেডারেল সার্কিট আপিল আদালত আদেশের ওপর দেওয়া স্থগিতাদেশও বহাল রাখে।

১৬০ বছরের প্রথা: যুক্তরাষ্ট্রে জন্মালেই নাগরিকত্ব

মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী প্রায় ১৬০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া প্রত্যেক শিশুই মার্কিন নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে—শুধু কূটনীতিক বা বিদেশি সামরিক বাহিনীর সন্তান ছাড়া।

কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তি দেয়—অবৈধভাবে বা অস্থায়ী ভিসায় থাকা ব্যক্তিদের সন্তানদের নাগরিকত্ব দিলে জাতীয় নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে।

এএসিএলইউর বক্তব্য: প্রেসিডেন্ট চাইলে এই অধিকার বদলাতে পারবেন না

বাদীপক্ষের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ACLU-এর জাতীয় আইনি পরিচালক সেসিলিয়া ওয়াং বলেন, “১৪তম সংশোধনী যে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা কোনো প্রেসিডেন্ট পরিবর্তন করতে পারেন না।”

তিনি আরও বলেন, “১৫০ বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্মালেই নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়টি আইন ও ঐতিহ্য—এবার সুপ্রিম কোর্টে এর চূড়ান্ত সমাধান আশা করছি।”

১৪তম সংশোধনীর ইতিহাস নিয়েও তর্ক

গৃহযুদ্ধের পর সাবেক দাস ও তাঁদের সন্তানদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতেই আনা হয়েছিল ১৪তম সংশোধনী। যুক্তরাষ্ট্রের সলিসিটর জেনারেল ডি জন সাওয়ারের দাবি—এটি সাময়িক ভিসায় থাকা বিদেশিদের সন্তানদের জন্য করা হয়নি।

তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে জন্মালেই নাগরিকত্ব—এ ধারণা সঠিক নয়।”

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলে বাড়বে অনিবন্ধিত মানুষের সংখ্যা

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট ও পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় বলা হয়েছে—জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধ হলে যুক্তরাষ্ট্রে অনিবন্ধিত মানুষের সংখ্যা ২০৪৫ সালের মধ্যে ২৭ লাখ এবং ২০৭৫ সালের মধ্যে ৫৪ লাখে পৌঁছাতে পারে।

আগেও সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন ট্রাম্প

ট্রাম্প আগে স্থগিতাদেশ বাতিলের আবেদন করলে গত জুনে সুপ্রিম কোর্ট তাঁর পক্ষে রায় দেয়—নিম্ন আদালত এখতিয়ার ছাড়িয়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। তবে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের মূল প্রশ্নে তখনও কোনো মন্তব্য করেনি আদালত।

এবারের শুনানিকে তাই অনেকেই বিষয়টির ভবিষ্যৎ নির্ধারণকারী ধাপ হিসেবে দেখছেন।