ঢাকা, বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১
Logo
logo

‘মাস্টারমশাই আপনি কিছুই দেখেননি?’ ৩২ লক্ষ টাকা কি বালিশের মধ্যে ছিল!


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ০৬ জানুয়ারী, ২০২৩, ১১:০১ পিএম

‘মাস্টারমশাই আপনি কিছুই দেখেননি?’ ৩২ লক্ষ টাকা কি বালিশের মধ্যে ছিল!

‘মাস্টারমশাই আপনি কিছুই দেখেননি?’ ৩২ লক্ষ টাকা কি বালিশের মধ্যে ছিল!

তপন সিনহার আতঙ্ক ছবির কথা মনে পড়ে! জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সেই ছবিতে সুমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সংলাপ শুনে যেন ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেছিল অনেকের ধমনীতে—মাস্টারমশাই আপনি কিছুই দেখেননি!
সেই মাস্টার ছিলেন সৎ। চোখের সামনে খুন দেখে আতঙ্কগ্রস্ত হয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু হুমকির মুখে পড়েও সততার পথ ছাড়েননি। শিরদাঁড়া শক্ত রেখে বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকতে চেয়েছিলেন প্রৌঢ় মাস্টারমশাই! 

অথচ বাংলায় এখন যে উল্টো ধারা মাস্টারমশাইদের একাংশের মধ্যে দেখা যাচ্ছে, শুক্রবার তাতে নয়া সংযোজন হল। আরও এক মাস্টারমশাইয়ের খোঁজ পাওয়া গেল, যাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার হল হিসাব বহির্ভূত ৩২ লক্ষ টাকা। নাম তাঁর অমিতাভ দাস (Khardaha Money Recovery Case)। 
অনেকের মতে, মানিক ভট্টাচার্য, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, তাপস মণ্ডলের মতো এই মাস্টারমশাইও কিছু দেখেননি। পাড়া, প্রতিবেশী, পরিবার, সমাজ কাউকে না।
বৃহস্পতিবার রাতে আচমকা ব্যারাকপুর কমিশনারেটের একদল পুলিশ ও গোয়েন্দা হানা দেন খড়দহের নাথুপাল ঘাট রোডের এক আবাসনে। আবাসনের যে ফ্ল্যাটে তল্লাশি অভিযান চালায় পুলিশ, সেই ফ্ল্যাটে থাকতেন অমিতাভ দাস নামে এক অধ্যাপক। তাঁর বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয়েছে নগদ ৩২ লক্ষ টাকা। এলাকায় কেউ কেউ রটিয়ে দেয় বালিশের মধ্যে নাকি লুকোনো ছিল টাকা। পুলিশ অবশ্য তার সত্যতা স্বীকার করেনি। তবে টাকা উদ্ধারের পর অমিতাভকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন গোয়েন্দারা।
অমিতাভ একটি বেসরকারি কলেজে পড়ান। অভিযোগ, মোটা টাকার বিনিময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের কলেজে ভর্তি করিয়ে দিতেন অমিতাভ। এমনকী কেউ যদি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারত, টাকার বিনিময়ে ভুয়ো সার্টিফিকেটও তৈরি করে দিতেন!(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({}); 
কদিন আগেই বারাসতের এক অবসরপ্রাপ্ত হেডমাস্টারের বাড়িতে ও অফিসের তল্লাশি চালিয়ে নিয়োগ ও টেট দুর্নীতির বড় চক্রের সন্ধান পেয়েছে ইডি। তাপস মণ্ডল নামে সেই মাস্টারমশাই ছাত্রদের থেকে ২১ কোটি টাকা তুলে দিয়েছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচার্যকে।
প্রসঙ্গত, এই মানিক ভট্টাচার্যও এক সময়ে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি ছিলেন যোগেশ চন্দ্র চৌধুরী আইন কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন তিনি। নিয়োগ দুর্নীতিতে আরও যে কজনের নাম জড়িয়েছে তাঁরাও ছিলেন শিক্ষক। শান্তিপ্রসাদ সিনহা, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্য এঁরা সবাই শিক্ষকতা করেছেন। সুবীরেশ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। 
ইডির দাবি, এঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই দুর্নীতি ও অনিয়মের অকাট্য প্রমাণ রয়েছে। এই শিক্ষকরা তাঁদের অর্থলোভে শুধু নিজেদের নামে বেনামে সম্পত্তি বানাননি, তাঁরা বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর কার্যত জীবন নিয়ে খেলেছেন। অথচ ঘটনা হল, এঁদের কাউকেই বাইরে থেকে বোঝা যেত না যে এত বড় দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে পারে তাঁদের বিরুদ্ধে।
খড়দহের ঘটনায় একই ভাবে বিষ্মিত পাড়া প্রতিবেশীরা। তাঁরা বিশ্বাসই করতে পারছেন না আপাদমস্তক ভদ্র দেখতে এবং জ্ঞানের কথা আওড়ানো অমিতাভর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠতে পারে! গত আড়াই বছর ধরে ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন অমিতাভ। তাঁর চালচলনে কোনও সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়েনি প্রতিবেশীদের। কখনও না!

খবর দ্য ওয়ালের/এনবিএস/২০২৩/একে