ঢাকা, শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১
Logo
logo

ভারতের বিখ্যাত পাড়াইয়াপ্পা হাতি, খ্যাতি যার জীবনের অভিশাপ


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ০৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩, ০৮:০২ পিএম

ভারতের বিখ্যাত পাড়াইয়াপ্পা হাতি, খ্যাতি যার জীবনের অভিশাপ

 ভারতের বিখ্যাত পাড়াইয়াপ্পা হাতি, খ্যাতি যার জীবনের অভিশাপ

‘পাড়াইয়প্পা’-  মানুষের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক , বিশালাকৃতির কান আর বড় শুড় নিয়ে জঙ্গল ও লোকালয়ে প্রায়ই তাকে দেখা যায় খাবারের সন্ধানে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন কার কথা বলা হচ্ছে। হ্যা ‘পাড়াইয়াপ্পা’ এমন এক  হাতি যে কিনা দীর্ঘ সময় ধরেই বন্য হাতি হয়েও মানুষের সাথে সুসম্পর্ক রেখে অবাধে চলাফেরা করছে লোকালয়ে। কয়েক যুগ ধরেই ভারতের কেরালা রাজ্যের মানুষের সাথে যেন খুব অভ্যস্ত হয়ে ঊঠেছে সে। রাজ্যের মুন্নার শহরে দেখা যায় হাতিটিকে। কথিত আছে ‘পাড়াইয়াপ্পা’ কখনই কাউকে আঘাত করেনি। বিবিসি।

তার নামকরণ করা হয় ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রজনীকান্ত অভিনীত ভারতের বিখ্যাত দক্ষিনী সিনেমা  ‘পাড়াইয়াপ্পার’ নামানুসারে। এই হাতিটি পর্যটকদের কাছেও অত্যন্ত জনপ্রিয় তার বন্ধুসুলভ আচরণের জন্য। ভ্রমণপিপাসুরা তার সাথে ছবি তুলতেও হয়ে যায় ব্যস্ত। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ হঠাৎ করেই গত কয়েকমাস ধরে হাতিটির আচরণে দেখা গেছে খানিক পরিবর্তন। অনেকেরই ধারণা এখন তার বয়স প্রায় ৫০ বছর।

জানুয়ারিতে এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, একদিন হাতিটি এক মটর ক্ষেতে খাবার গ্রহণের সময় রাস্তা দিয়ে চলতে থাকা একটি ট্রাকের উইন্ডশিল্ড ভেঙে ফেলে। এমন আচরণে স্থানীয়রা বেশখানিক ভাবনায় পড়ে যায়।

তবে এশিয়ার আন্তর্জাতিক হাতি সংরক্ষণ গ্রুপের সদস্য বিজ্ঞানী ডক্টর পিএস ইয়াশা বলছেন, অতিরিক্ত মানুষের সান্নিধ্যে আসার ফলেই নাকি তার আচরণে এমন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সাধারণত প্রানীরা মানুষের বেশি সংস্পর্শে বেশি আসলেই এ ধরনের বিপর্যয় তাদের মস্তিষ্কে ঘটতে পারে। অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের মতেও অতিরিক্ত মানুষের সঙ্গে মেলামেশার কারণে পাড়াইয়াপ্পার আচরণে এমন অধপতন।

ভারতের কেরালা রাজ্যে ২০১৮ ও ২০২২ সালে  হাতির আক্রমণে ১৫০ জনের প্রানহানির ঘটনা ঘটেছে। জানুয়ারিতে রাজ্যের পালাক্কার জেলায় এমন জখমমে আঘাত প্রাপ্ত মানুষের দেহ পাওয়া যায়।তবে এরা সবাই পশু শিকারে বনে গিয়েছিল বলে জানা গেছে। কিন্ত পাড়াইয়াপ্পার আচরণ ছিল ব্যাতিক্রম। মুন্নারের এক বাসিন্দা ললিতা জানান, হাতিটি দিনে তিন বেলা করেও মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সে তার খাবার হিসেবে কলা ও বাশ সংগ্রহ করত। আরেক  স্থানীয় রেঞ্জিত জানান, তিনি প্রায়ই হাতিটির ছবি তুলতেন। দেখা যেত সেসময় সে দূর থেকে দাঁড়িয়ে ছবির জন্য পোজ দিত। এমনকি পাড়াইয়াপ্পা তাদের অঞ্চলের অনেকটাই যেন শুভেচ্ছা দূত হিসেবেই অবস্থান করছে।

অথচ এই শান্ত হাতিটি কিনা গত ডিসেম্বরে দুই পর্যটকের মটর সাইকেল উল্টে দেয়। এসময় তারা প্রাণীটির ছবি তুলতে গিয়েছিল। আর এপ্রিলে ৫০ জনের যাত্রীবাহী একটি বাসের উইন্ডশিল্ডে আঘাত করে তা ভেঙ্গে ফেলে। তবে সকলের ধারণা কেউ হয়ত পাড়াইয়াপ্পাকে রাগান্বিত করে তুলেছিল।

এতকিছুর পরেও মানুষের অজস্র ভালোবাসায় সে এলাকায় এখনও বহাল তবিয়তেই চলাফেরা করে আসছে।আর প্রাণীবিজ্ঞানীরা বলছেন, বন্যপ্রানীর এমন আচরণ খুব অস্বাভাবিক নয়। তবে মানুষের দ্বারা বিরক্তির কারণেও এমন বিভ্রাট ঘটার শঙ্কা বেশি। মিডিয়ার বদৌলতে পাড়াইয়াপ্পা এখন যেন ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের অনেকের কাছেই প্রিয় প্রানী হিসেবে স্থান লাভ করেছে।  তাই এটিকে যত্নের সাথে সংরক্ষণের বিষয়ে সবাইকে সচেতন হবার আহবান জানিয়েছে  স্থানীয় বাসিন্দারা।

এনবিএস/ওডে/সি