বঙ্গবন্ধুর গ্রেপ্তার ঠেকাতে প্রাণ দিয়েছিলেন ফুটবলার খোকন

২৫ মার্চ কালরাতে ঘাতকের বুলেট কেড়ে নিয়েছিল বাংলার নিরীহ মানুষের। তবে তার আগেই হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন একজন। ইতিহাসের পাতায় যিনি আড়ালেই রয়ে গেছেন। এতদিন তাকে একজন পুলিশ সদস্য ভাবা হলেও, তিনি ছিলেন একজন ফুটবলার ও ক্রীড়া সংগঠক। খোকন গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যাওয়া এক চরিত্র। পুরো নাম আবু জাফর আকরাম উল্লাহ খোকন।

খোকন স্বাধীনতা পূর্ব ঢাকা মাঠের ফুটবলার। উত্তপ্ত ৭১ এর ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিরোধ গড়ায় হানাদার বাহিনীর বুলেট কেড়ে নেয় খোকনের প্রাণ। তিনি ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে খেলেছেন তৃতীয় বিভাগের ফুটবল, ছিলেন সংগঠক। এছাড়া বর্তমান শেখ জামাল ক্লাবের ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও। অথচ সেখানে নেই তার কোনো স্মৃতিচিহ্ন, মেলেনি স্মৃতিও। যুদ্ধের সময় খোকনের পরিবার ধানমন্ডিতে ছিল সবার সুপরিচিত। খোকন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেখানেই যেতেন সেখানেই তার সঙ্গে থাকতেন। তাই বঙ্গবন্ধু তাকে খুব স্নেহ করতেন।

অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে বঙ্গবন্ধু খোকনকে বললেন, এখন থেকে তোর দায়িত্ব ধানমন্ডিতে যারা আমরা বাঙালিরা বসবাস করি তাদের পাকিস্তানিরা যাতে কোন ক্ষতি করতে না পারে তুই খেয়াল রাখবি। কোথায় কী হয় মনিটরিং করবি আমাকে খবরাখবর জানাবি। আর লিডারের এই নির্দেশনা পালনের খবরটি পাড়ার খোকনের বন্ধু-বান্ধব সবাই জানতেন। তাই ২৫ মার্চ ৭১-এ সন্ধ্যার পর থেকেই ঐ ধানমন্ডিতে খোকনের ব্যস্ততা ঘিরে বন্ধুরা ভাবছিলেন কী ঘটতে যাচ্ছে রাতে। খোকন কেন বারবার ৩২ নাম্বারের দিকে যাচ্ছে আবার অন্য রাস্তায় ফিরে আসছে? এমন নানান শঙ্কা নিয়েই বন্ধুরা রাতে যার যার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। রাত যত বাড়ছে ততই যেন বিপদের আশঙ্কা বেড়েই চলছে। এরই মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ল পাকিস্তানি সেনারা ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাস্তায় নামছে। সবার আশঙ্কা সেনারা বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণ করতে পারে। রাত ১১টার পর থেকেই রাস্তায় গোলাগুলির শব্দ।

চারদিকেই সুনসান নীরবতায় শুধু গুলির আওয়াজ ভেসে আসছে। ধানমন্ডির বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যেই রাত পার করলেন। এর মধ্যে কারফিউ জারির ঘোষণা। সকালেই ধানমন্ডির বাসিন্দারা জানতে পারলেন বঙ্গবন্ধু বাড়িতে নেই। বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি সেনারা আটক করল কিনা এটাই ধানমন্ডির বাসিন্দারা কেউ নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। ঐ রাতে ৭ নাম্বার রোডের খোকনের পরিবারের কারো ঘুম ছিল না। কারণ খোকন তো ঘরে ফিরেনি। সবাই উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় রাত পার করলেন। পরে পাওয়া যায় এ তরুণ খেলোয়াড়ের মরদেহ। সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করেন শহীদ খোকনের বোন তাহমিনা খান ডলি। জানান, বঙ্গবন্ধু নিজেই জানিয়ে ছিলেন কীভাবে মারা গিয়েছিল খোকন।

ডলি বলেন, যেখানে বঙ্গবন্ধু সেখানেই খোকন, হয়তো বক্তৃতা শুনবে পিছে আর না হয় সঙ্গে সঙ্গে যাবে। তখন বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আপনার ছেলে খোকনকে তো আমি বাঁচাতে পারলাম না, আমার বুকেই তাকে গুলি করে মেরে ফেলল এরপর মায়ের হাত ধরে তিনি কেঁদে ফেলেছিলেন।

এনবিএস/ওডে/সি

news