লিচুর বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত মালিকরা, আশানুরুপ ফলনের আশা

গ্রীষ্মের দ্বিতীয় মাস জ্যৈষ্ঠ শুরু হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে। আম, কাঠাল ও লিচুর  সুস্বাদু ফলের সরবরাহ বেশি থাকায় সবার কাছে মাসটি ‘মধুমাস’ নামেই পরিচিত। মধুমাসের ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম লিচু। রসে টইটুম্বুর এ ফলের নাম শুনলেই জিভে জল আসে। পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে লিচুতে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম। এছাড়া লিচুতে রয়েছে আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। এ কারণে দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা মেটাতে লিচু অনেক বেশি ভূমিকা রাখে। 

জেলার সীমান্তবর্তী তিন উপজেলার মাটি লিচু উৎপাদনের উপযোগী হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে লিচুর আবাদ। তার মর্ধ্যে বিজয়নগর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি লিচুর আবাদ হয়। স্বাদে ও গুণে অনন্য হওয়ায় এখানকার লিচুর কদর রয়েছে দেশজুড়ে। তবে প্রচণ্ড গরমে লিচু ফেটে যাওয়া ও আকারে কিছুটা ছোট হয়েছে এবার। তীব্র তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে চাষিদের সেচসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে কৃষি বিভাগ থেকে।

জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার ৫৭০ হেক্টর জমিতে বোম্বাই, পাটনা ও চায়না জাতের লিচুর আবাদ করা হয়েছে। জেলার সীমান্তবর্তী বিজয়নগর, কসবা এবং আখাউড়া উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে হাজার খানেক লিচু বাগান রয়েছে। এর মধ্যে বিজয়নগরের সিঙ্গারবিল, বিষ্ণুপুর ও পাহারপুর ইউনিয়নে বাগানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

বিভিন্ন বাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছে থোকায় থোকায় শোভা পাচ্ছে বোম্বাই, পাটনা ও চায়নাসহ বিভিন্ন জাতের লিচু। কিছু কিছু গাছে ঝুলে থাকা লাল টুকটুকে লিচু বাতাসে দোল খাচ্ছে। আবার কিছু গাছে লাল সবুজ রঙা আধা পাকা লিচু ঝুলে আছে। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এসব বাগান দেখতে ভিড় করছেন। অনেকে আবার বাগান থেকে লিচু খাচ্ছেন, কিনেও নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের জন্য।

বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থী সুহেল মিয়া বলেন, বাগানে এসে গাছে দোল খেতে থাকা লিচু দেখে আমি মুগ্ধ। মালিকের অনুমতি নিয়ে দুই-একটা লিচু খেয়েছি। লিচুগুলো খুবই রসালো আর মিষ্টি। পরিবারের জন্য ৩০০ লিচু কিনেছি। তবে এখনো পুরোপুরি লিচু বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠেনি। আরও সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে।  

বাগানের মালিক ছিদ্দিক মিয়া বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। এখন চলছে বেচাকেনা। বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা আসছেন বাগানে। দামদর করে বাগান থেকেই লিচু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তীব্র গরমের কারণে কিছু ফেটে নষ্ট হয়ে গেছে।

শিহাব মিয়া বলেন, আমার বাগানে বোম্বাই, পাটনা ও চায়না-থ্রিসহ তিন জাতের লিচু আবাদ করেছি। সর্বমোট বড়-ছোট মিলিয়ে ৯৩টি গাছ রয়েছে। ফল ধরার সঙ্গে সঙ্গে পরিচর্যা শুরু করেছি। তবে এবার অতিরিক্ত গরমের কারণে দিনে কয়েক বার গাছে পানি দিতে হয়েছে। ফলন ভালো হলেও আকারে কিছুটা ছোট হয়েছে লিচু। তবে লাভবান হব আশা করছি। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, নয়টি উপজেলার মধ্যে সীমান্তবর্তী তিনটি উপজেলায় লিচুর আবাদ হয় বেশি। এখানকার মাটি ভালো হওয়াই প্রতি বছর বাড়ছে বাগানের সংখ্যা। মৌসুমের শুরুতেই কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাপমাত্রার কারণে লিচু কিছুটা ছোট হয়েছে। কৃষকদের নিয়মিত সেচের পরামর্শ দিয়েছি। 

news