ইস্তাম্বুলে চার দিন ধরে কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় চলা পাকিস্তান-আফগানিস্তান শান্তি আলোচনা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। সীমান্তে উত্তেজনা কমানো ও দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এই আলোচনায় দুই দেশ অংশ নিলেও কোনো সমাধান আসেনি।

জিও টিভির প্রতিবেদনে জানা যায়, আলোচনার ভেস্তে যাওয়ার পর বুধবার ২৯ অক্টোবর পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সরাসরি সতর্কবার্তা দেন আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারকে। তিনি বলেন, পাকিস্তান আর সহ্য করবে না— প্রয়োজনে তালেবানদের ‘নির্মূল’ করে ফেলবে।

এক্স সাবেক টুইটার–এ দেওয়া এক পোস্টে আসিফ লেখেন,

“আমরা দীর্ঘদিন ধরে তোমাদের বিশ্বাসঘাতকতা ও উপহাস সহ্য করেছি, কিন্তু আর নয়। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে কোনো সন্ত্রাসী বা আত্মঘাতী হামলা ঘটলে, তোমরা তার ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করবে। যদি চাও, আমাদের সংকল্প ও শক্তি পরীক্ষা করো— তবে এর ফল হবে কেবল তোমাদের ধ্বংস।”


“তালেবান শাসনকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে পাকিস্তানের পুরো অস্ত্রাগারও ব্যবহার করতে হবে না। প্রয়োজনে আমরা তাদের গুহায় লুকিয়ে থাকতে বাধ্য করব। আর সেই পরাজয়ের দৃশ্য এই অঞ্চলের মানুষদের জন্য শিক্ষণীয় হবে।”

এর আগে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার স্বীকার করেন, ইস্তাম্বুলের যুদ্ধবিরতি আলোচনা কোনো কার্যকর ফলাফল ছাড়াই শেষ হয়েছে।

২০২১ সালে তালেবান কাবুল দখল করার পর থেকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তে উত্তেজনা ক্রমেই বেড়েছে। চলতি মাসে হওয়া সংঘর্ষ ছিল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে প্রাণঘাতী— যেখানে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

রয়টার্সকে আফগান ও পাকিস্তানি সূত্র জানায়, ১৯ অক্টোবর দোহায় উভয় দেশ অস্ত্রবিরতিতে প্রাথমিকভাবে সম্মত হলেও ইস্তাম্বুলে দ্বিতীয় দফা আলোচনায় একমত হওয়া যায়নি।

পাকিস্তানি নিরাপত্তা সূত্রের দাবি, আফগান তালেবানরা পাকিস্তানি তালেবানদের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিতে অস্বীকৃতি জানায়। অপরদিকে, আফগান পক্ষ জানিয়েছে— তারা পাকিস্তানি তালেবানদের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণই রাখে না।

২০২১ সালে তালেবানরা ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তান প্রদেশে সন্ত্রাসী হামলা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশজুড়ে সংঘটিত সহিংসতার ৯৬ শতাংশের বেশি এই দুই প্রদেশেই ঘটে।

পাকিস্তান পুলিশের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ২০২৫ সালের প্রথম আট মাসেই খাইবার পাখতুনখোয়ায় ৬০০টিরও বেশি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় ১৩৮ জন বেসামরিক নাগরিক ও ৭৯ জন পুলিশ সদস্য নিহত, এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।

 

news