‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবি নিয়ে ভারতজুড়ে বিতর্ক: মুক্তি না দেওয়ার দাবি

ভারতে বিতর্কিত ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ। মঙ্গলবার সর্বোচ্চ আদালতে জানানো আবেদনে আগামী ৫ মে সিনেমাটির মুক্তি বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে।

জমিয়ত উলেমায়ে হিন্দ বলেছে, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিটি মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য অবমাননাকর। এতে মুসলমানদের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। এমন পরিস্থিতিতে এটা মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার অধিকার লঙ্ঘন বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বুধবার পশ্চিমবঙ্গের জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক মুফতি আব্দুস সালাম রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘আপত্তি আছে বলেই জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ এটাকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে গেছে। এর ফলে বিভাজন বাড়বে এবং এতে কোনও সত্যতা নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ধরণের কাল্পনিক বিষয় মুক্তি পাওয়া দেশের সম্প্রীতির জন্য ক্ষতিকর হবে। যেটা দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বও বলছেন। এবং সামাজিক সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ যথারীতি সেটা অনুভব করছে। যার কারণে সুপ্রিম কোর্টের কাছে স্টে অর্ডার চাওয়া হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি এটার শুনানি হয় এবং এটাকে আটকানো যায় ভালো হবে।’

মঙ্গলবার ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিটির মুক্তি নিষিদ্ধ করার আবেদনের শুনানি করতে অস্বীকার করে। এ সময়ে সিনিয়র আইনজীবী কপিল সিব্বল এবং আইনজীবী নিজাম পাশা বিচারপতি কেএম জোসেফ এবং বিচারপতি বিভি নাগরত্নার সমন্বিত বেঞ্চকে জানান, সিনেমাটির ট্রেলার এক কোটি ৬০ লাখ বার দেখা হয়েছে। আগামী শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে এই ছবি। আইনজীবী নিজাম পাশা বলেন, এই ছবিটি ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্যের সবচেয়ে খারাপ উদাহরণ।  

অন্যদিকে, বেঞ্চ তার মন্তব্যে বলেছে, ‘অনেক ধরনের বিদ্বেষমূলক বক্তব্য আছে। এই চলচ্চিত্রটি প্রমাণপত্র পেয়েছে এবং বোর্ড এটি অনুমোদন করেছে। এটা এমন নয় যে কেউ মঞ্চে উঠে আজেবাজে কথা বলতে শুরু করেছে। আপনি যদি ছবিটির মুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করতে চান তবে আপনার প্রশংসাপত্রকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে এবং তাও যথাযথ ফোরামের মাধ্যমে।’

এ বিষয়ে বিশিষ্ট আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, যা যা প্রয়োজন তাই করা হবে। বিচারপতি নাগরত্না বলেন, আবেদনকারীকে প্রথমে হাইকোর্টে যেতে হবে। এ বিষয়ে আইনজীবী নিজাম পাশা বলেন, শুক্রবার ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে, তাই সময় নেই। বেঞ্চ বলেছে, এটা কোনো ভিত্তি নয়। এভাবে তো সবাই সুপ্রিম কোর্টে আসা শুরু করবে।

এদিকে, মুসলিম ইয়ুথ লিগের কেরালা রাজ্য কমিটি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবির ‘অভিযোগ’ প্রমাণ করলে তাকে এক কোটি টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করেছে। বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেনের এই ছবিটি ৩২ হাজার নারীর ধর্মান্তরের গল্প  যারা রাজ্য থেকে নিখোঁজ হয়ে সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আইএসআইএস’-এ যোগ দিয়েছিল বলা হয়েছে। এরপরেই ওই ইস্যুতে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিতর্কিত ছবিটিতে মুসলিম সম্প্রদায়কে নিশানা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, ছবিটিতে ভুল তথ্য দেখানো হয়েছে এবং এর মাধ্যমে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের (মুসলিম) বিরুদ্ধে বিদ্বেষের বীজ বপনের চেষ্টা করা হয়েছে। কেরালা মুসলিম ইয়ুথ লিগের রাজ্য কমিটি ছবিটির গল্পকে সত্য প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ দিয়েছে এবং যে এটি প্রমাণ করবে তাকে এক কোটি টাকা পুরস্কার দেওয়ার কথা বলেছে। প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য প্রত্যেকটি জেলায় ৪ মে সংগ্রহ কেন্দ্র খোলা হবে। এবং যে কেউ সংগ্রহ কেন্দ্রে গিয়ে প্রমাণ দিতে পারেন বলেও সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।  

রাজ্য সরকারের কাছে এই ছবির স্ক্রিনিং রুখে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস বলেছে, এটি একটি প্রোপাগ্যান্ডা ছবি। এই ছবির মাধ্যমে ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন নির্মাতারা।

কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের মতে, ছবিটি ‘লাভ জিহাদ’ ইস্যু তুলে রাজ্যে সঙ্ঘ পরিবারের (রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ/আরএসএস) এজেন্ডা প্রচার করছে। তিনি সঙ্ঘ পরিবারকে ‘সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত বীজ বপন করে’ রাজ্যে ধর্মীয় সম্প্রীতি ধ্বংস করার চেষ্টা করার অভিযোগও করেছেন।

বিজয়ন বলেন, চলচ্চিত্রের ট্রেলারে আমরা দেখেছি কেরালার ৩২ হাজার নারীকে ধর্মান্তরিত করে ইসলামিক স্টেটের সদস্য করা হয়েছে। এই বানোয়াট গল্পটি সঙ্ঘ পরিবারের (রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ/আরএসএস) মিথ্যার কারখানার ফসল বলেও মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিআইএম নেতা পিনারাই বিজয়ন।

এনবিএস/ওডে/সি

news