পরিচালকের সঙ্গে নায়িকার প্রেম বা বিয়ে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন কিছু নয়। হলিউডের পাশাপাশি ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও এর উদাহরণ কম নেই। যেমন—‘বাহুবলি’খ্যাত রম্যা কৃষ্ণা পরিচালক কৃষ্ণা ভামসির সঙ্গে বিয়ে করেছেন, খুশবু মালা পরান পরিচালক সুন্দর সিরের সঙ্গে, এবং বলিউড অভিনেত্রী ইয়ামি গৌতম বিয়ে করেছেন পরিচালক আদিত্য ধরকে। সম্প্রতি এই তালিকায় নতুন সংযোজন হল অভিনেত্রী সামান্থা রুথ প্রভু, যিনি পরিচালক রাজ নিদিমোরুকে বিয়ে করেছেন।
সামান্থা-রাজের বিয়ের পর উঠেছে প্রশ্ন—নায়িকা-পরিচালক কেন প্রেমে পড়েন? সঠিক উত্তর দেওয়া সহজ নয়। তবে শুটিং সেটের পরিবেশ এবং কাজের ঘনিষ্ঠতা বিষয়টি কিছুটা ব্যাখ্যা করতে পারে। দক্ষিণী সিনেমার পরিচালক অশোক তেজা এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “শুটিং সেটে প্রেমের সূচনা হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। কারণ পরিচালক আর অভিনেতারা প্রতিদিন ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন। চরিত্রের বৈশিষ্ট্য, লুক, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ—সবকিছু নিয়ে আলোচনা হয়। ভালো চলচ্চিত্রের জন্য পেশাগতভাবে একে অপরের সঙ্গে থাকতে হয়।”
অশোক তেজা মনে করেন, বন্ধুত্ব থেকে ব্যক্তিগত সম্পর্কের সূচনা হয়। তিনি বলেন, “তারা যখন একে অপরকে বন্ধু হিসেবে দেখতে শুরু করেন, তখন ধীরে ধীরে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ শেয়ার করতে থাকেন। সময়ের সঙ্গে তারা একে অপরকে উপযুক্ত মনে করতে পারেন। সেই বন্ধন একসময় বিয়েতে রূপ নিতে পারে। তেলেগু বা বলিউড—উভয় ক্ষেত্রেই এমন উদাহরণ আছে।”
হাস্যরসের ছলে জানতে চাওয়া হলে, অশোক তেজা বলেন, “আমি ইতোমধ্যে বিবাহিত। তবে সামান্থা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বছর ধরে বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে সূক্ষ্ম ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। তারা একসাথে ছবিও পোস্ট করতেন।”
কয়েক সপ্তাহ আগে জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানা ও অভিনেতা বিজয় দেবরকোন্ডা গোপনে বাগদান করেছেন। দু’জনই আগে থেকে সূক্ষ্ম ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন—একসাথে ছুটি কাটানো, বিয়ের আংটির ছবি, আর ‘দ্য গার্লফ্রেন্ড’ সিনেমার প্রচারে প্রেম ও সম্পর্কের মন্তব্য। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে তারা বিয়ে করবেন।
অশোক তেজা রাশমিকা-বিজয়ের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “অন-স্ক্রিন কেমিস্ট্রি বাস্তব জীবনে ছড়িয়ে পড়ে। অভিনেতার সঙ্গে অভিনেত্রীর বিয়ে হওয়া যুক্তিসঙ্গত, কারণ তারা একে অপরের চাপ ও শিডিউল বোঝেন। এটি ইন্ডাস্ট্রির বাইরের সঙ্গীর তুলনায় মানিয়ে নিতে অনেক সহজ করে তোলে।”
মানুষ কেন প্রেমে পড়েন? মার্কিন নৃবিজ্ঞানী হেলেন ফিসার এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মানুষের প্রেমে পড়ার প্রক্রিয়া তিনটি স্তরে বিভক্ত। প্রথম স্তর হলো কামপ্রবৃত্তি, যা শরীরের টেস্টোস্টেরন (পুরুষ) ও ইস্ট্রোজেন (নারী) হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
দ্বিতীয় স্তর হলো আকর্ষণ। এটি মাদক বা অ্যালকোহলের মতো। প্রেমের অনুভূতি মস্তিষ্কে ডোপামিন (আনন্দ), অ্যাড্রিনালিন (উত্তেজনা) ও নরএপিনেফ্রিন (সতর্কতা) নিঃসরণ করে। প্রথমবার কারো সঙ্গে দেখা হলে গাল লাল হওয়া, হাত ঘামা, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া এই স্তরের লক্ষণ।
তৃতীয় স্তরে আসে অক্সিটোসিন হরমোন। এটি গভীরভাবে সম্পর্ক গড়ে তোলার অনুভূতি দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করার ইচ্ছা সৃষ্টি করে। নায়িকা-পরিচালকেরাও রক্তে-মাংসের মানুষ। তাই হেলেন ফিসারের এই তিন স্তরের প্রভাব তাদের সম্পর্কেও কার্যকরী।
