অল্পের জন্য বাঁচল রাহুলের সাংসদ পদ, কী আছে আইনে, কেনই বা রক্ষা পেলেন

 সুতোর ব্যবধান বললেও বোধহয় কম বলা হবে।

২০১৯-এর লোকসভা ভোটে জোড়া কেন্দ্র থেকে লড়েছিলেন রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। পুরনো কেন্দ্র অমেঠিতে হেরে গিয়েছিলেন স্মৃতি ইরানির কাছে। জিতেছিলেন কেরলের ওয়ানাড়ে। সেই কংগ্রেস নেতার সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যেতে পারত বৃহস্পতিবার। কিন্তু সূক্ষ্ম ব্যবধানে আপাতত সাংসদ পদ (MP Status) রয়ে গেল রাহুলের।

কেন?

২০১৯ সালে কর্নাটকের ভোটের প্রচারে গিয়ে রাহুল গান্ধী মন্তব্য করেছিলেন, ‘দেখা যাচ্ছে যাঁরাই দুর্নীতি করছেন তাঁদেরই পদবি মোদী। আইপিএলে লুঠ করেছিলেন ললিত মোদী। নীরব মোদী টাকা লুঠ করে পালিয়ে গিয়েছেন। আর যিনি তাঁকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন তিনিও একজন মোদী। দু’জনেই একই রাজ্যের।’

এরপরেই গুজরাতের বিজেপির এক প্রাক্তন বিধায়ক, বর্তমান সাংসদ সুরাতের আদালতে মামলা করেন। তাঁরও পদবি মোদী। তিনি আদালতে বলেন, মোদী পদবিকে রাহুল গান্ধী অপমান করেছেন।

সেই মামলারই এদিন চূড়ান্ত রায় দান ছিল। সশরীরে সুরাতের আদালতে হাজির ছিলেন রাহুল। দোষী সাব্যস্ত করার পর, সাজা ঘোষণার আগে রাহুলকে বিচারক জিজ্ঞেস করেন, আপনার কিছু বলার আছে? আপনি কি অনুতপ্ত? জবাবে রাহুল বলেন, ‘রাজনীতির মঞ্চ থেকে রাজনীতির কথা বলেছি। এখানে অনুতাপের কোনও বিষয় নেই।’ মামলাকারীর আইনজীবীরা তখন আর্জি জানান, রাহুল গান্ধী একরোখা মনোভাব দেখাচ্ছেন। ওঁকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হোক।

তারপর বিচারক রাহুলকে দু’বছরের কারাদণ্ডের সাজা শোনান। পাল্টা রাহুল বলেন, তিনি এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চতর আদালতে যাবেন। যেহেতু তিন বছরের কম কারাদণ্ডের সাজা তাই সুরাতের ওই আদালতই রাহুলের জামিন মঞ্জুর করে। তাঁকে নির্দেশ দেয়, জেলযাত্রার এই সাজা আপাতত ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করা হল। এই সময়ের মধ্যে রাহুলকে উচ্চতর আদালতে পিটিশন দাখিল করতে হবে। তারপরেই আদালত থেকে বেরিয়ে যান রাহুল।

এখন প্রশ্ন হল, কেন রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যেতে যেতেও হল না? এই প্রশ্নের উত্তরে যাওয়ার আগে দেখে নেওয়া যাক আইন এবং তার বদলের ঘটনা—

১৯৫২ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে ৮ (৪) ধারায় বলা ছিল, নিম্ন আদালতে কোনও সাংসদ বা বিধায়ককে যদি দু’বছরের বা তার বেশি জেলের সাজা দেওয়া হয় তাহলে তাঁর সাংসদ বা বিধায়ক পদ সঙ্গে সঙ্গে খারিজ হবে না। তিনি উচ্চ আদালতে আবেদন জানাতে পারবেন।

৬০ বছর এভাবেই চলছিল। কিন্তু ৬১ বছরের মাথায় ২০১৩ সালের অক্টোবরে যুগান্তকারী রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি একে পট্টনায়েক ও বিচারপতি এসজে মুখোপাধ্যায়ের বেঞ্চ বলে, জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে ৮ (৪) ধারা অসাংবিধানিক। যে আদালতই কোনও সাংসদ বা বিধায়কের বিরুদ্ধে দু’বছর বা তার বেশি জেলের সাজা দিক সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সাংসদ বা বিধায়ক পদ খারিজ হয়ে যাবে।

এমন উদাহরণ সম্প্রতিই ঘটেছে। ২০১৯-এর একটি ঘৃণাভাষণের মামলায় উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির বিধায়ক আজম খানকে তিন বছরের জেলের সাজা দিয়েছে এলাহাবাদ কোর্ট। ২০১৩-র সংশোধিত আইন অনুযায়ী সঙ্গে সঙ্গে আজম খানের বিধায়ক পদও খারিজ হয়ে গিয়েছে। লালু প্রসাদকে জেল খাটতে হয়েছে চারবার। শুধু জেলে যাওয়াই নয়, সাজা খাটার পর আরও ছয় বছর ভোটে প্রার্থী হতে পারেন না অভিযুক্ত। যেমনটা হয়েছে লালু ও আজম খানের ক্ষেত্রে।

রাহুল গান্ধীকে যদি আজকে জামিন না দিত সুরাতের আদালত তাহলে তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হওয়া ছিল অবধারিত। কিন্তু তা হচ্ছে না। সুতোর ব্যবধানে ওয়ানাড়ের সাংসদ থাকছেন রাহুল। তবে নজর থাকবে মোদী পদবি বিতর্কের মামলায় উচ্চতর আদালত কী বলে।
খবর দ্য ওয়ালের /এনবিএস/২০২৩ /একে

news