নেতানিয়াহুর নতি স্বীকার: হিব্রু বসন্তের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন ইহুদিবাদীরা


দখলদার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সাময়িকভাবে বিচার বিভাগীয় সংস্কার পরিকল্পনা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইসরাইলি বুদ্ধিজীবি এবং মিডিয়াগুলো 'হিব্রু বসন্ত' ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরাইলে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে। কোনো কোনো মিডিয়া জানিয়েছে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে প্রায় ৭ লক্ষ লোক বিক্ষোভ করেছে। আরব মিডিয়াগুলো অধিকৃত এই ভূখণ্ডের চলমান পরিস্থিতিকে 'হিব্রু বসন্ত' বলে উল্লেখ করেছে। আরব মিডিয়ার এরকম বর্ণনায় ইহুদিবাদীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

ইহুদিবাদী সংবাদপত্র "হারেৎজ" অধিকৃত ভূখণ্ডের বর্তমান বিক্ষোভ সম্পর্কে আরব মিডিয়া বিশেষ করে মিশরীয় সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করেছে। পত্রিকাটি লিখেছে, ইসরাইলের বর্তমান সংকটের সংবাদ তুলে ধরতে গিয়ে 'হিব্রু বসন্ত' পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। এটা  ইহুদিবাদী ইসরাইলের শাসনব্যবস্থার জন্য একটা বড় রকমের ধাক্কা। কোনো কোনো মিডিয়া বলেছে "ইসরাইলের দিন শেষ" হয়ে এসেছে। হিব্রু সংবাদপত্র হারেৎজ তেল আবিবের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মিডিয়াগুলোর এ ধরনের বর্ণনার নিন্দা জানিয়েছে।

বিচার বিভাগীয় সংস্কার পরিকল্পনার ব্যাপারে জনগণের ব্যাপক বিরোধিতার মুখে নেতানিয়াহু ওই পরিকল্পনা সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। ব্যাপক চাপের কারণে সোমবার রাতে নেতানিয়াহু জোটের নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে তার ওই বিতর্কিত পরিকল্পনা স্থগিত করার ঘোষণা দেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন: আমি  বিচার বিভাগীয় সংস্কার পরিকল্পনাটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেইসঙ্গে সংস্কারের ব্যাপারে সংলাপের সুযোগ দিচ্ছি।

নেতানিয়াহুর দুটি পদক্ষেপের ব্যাপারে ইহুদিবাদীরা শঙ্কিত। প্রথমটি হলো ইসরাইলের যুদ্ধমন্ত্রীকে বরখাস্ত করা। যুদ্ধমন্ত্রী গ্যালান্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েও প্রকাশ্যে বিতর্কিত বিচারিক সংস্কার পরিকল্পনার সমালোচনা করেছিলেন। সে কারণে নেতানিয়াহু গত রোববার (২৬ মার্চ) তাকে বরখাস্ত করেন। এই ঘটনার ব্যাপক বিরোধিতা করেছে ইহুদিবাদী সেনাবাহিনী। যুদ্ধমন্ত্রীর প্রতি সেনাবাহিনী তাদের সমর্থন জানিয়েছে এবং সেইসাথে ইহুদিবাদী চিন্তাবিদরাও এ বিষয়ে হুশিয়ারি দিয়েছে।

ইসরাইলের পাবলিক সিকিউরিটি সার্ভিস শাবাক-এর সাবেক প্রধান "অ্যামি আয়ালোন" এ প্রসঙ্গে বলেছেন: নেতানিয়াহু সেনাবাহিনীকে ভেঙে দেওয়াসহ দেশের নিরাপত্তা ধ্বংস করার মতো আরেকটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি বলেন: নেতানিয়াহুর সরকার যে বিপজ্জনক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন সেটা অন্যদের চেয়ে গ্যালান্ট ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিলেন।

ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটও সোমবার এক অডিও বার্তায় স্বীকার করেছেন: ১৯৭৩ সালে মিশরের সঙ্গে অক্টোবর যুদ্ধের পর ইসরাইল তার অস্তিত্বের সবচেয়ে সংকটজনক পর্যায়ে রয়েছে।

দ্বিতীয় উদ্বেগজনক পদক্ষেপটি হলো তার মন্ত্রিসভার সমর্থনে দলের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ করার আহ্বান। এই পদক্ষেপ অভ্যন্তরীণ সংঘাতকে উস্কে দেবে। আর তা হলে 'হিব্রু বসন্তের' ভিত্তি তৈরি করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
খবর পার্সটুডে/ এনবিএস/ ২০২৩/একে

news