অগ্নিপথ প্রকল্পে সেনা নিয়োগের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, মৃত ২

ভারতে অগ্নিপথ প্রকল্পে চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদী যুবকরা উত্তাল হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন ঘটনায় এ পর্যন্ত ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, সেনাবাহিনীতে তাদের স্থায়ীভাবে নিয়োগ করতে হবে।

আজ (শুক্রবার) দুপুরে তেলঙ্গানর সেকেন্দরাবাদ স্টেশনে উত্তেজিত বিক্ষোভকারীদের প্রতিহত করতে গুলি চালায় পুলিশ। ওই ঘটনায় এক আন্দোলনকারী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৫ জন। আহতদের মধ্যে ১৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।  

অগ্নিপথ প্রকল্পের প্রতিবাদে বিহারের লক্ষীসরাইয়ে দু’টি ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় মুজাফফরপুর-ভাগলপুর ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসের এক যাত্রীর মৃত্যু হয়। সূত্রের খবর, আতঙ্কে মৃত্যু হয়েছে ওই যাত্রীর। যে ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়েছিল সেই ট্রেনেই ছিলেন তিনি।  

গত ১৫ জুন থেকে শুরু হওয়া প্রতিবাদ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে  বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। উত্তর প্রদেশ ও বিহারে প্রতিবাদীরা ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দিলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব রেলের সম্পত্তির ক্ষতি না করার আবেদন জানিয়েছেন।  

ফিরোজাবাদে আগ্রা-লক্ষনৌ এক্সপ্রেসওয়েতে চারটি বাস ভাঙচুর ও অবরোধ সৃষ্টি করা হয়েছে। হরিয়ানার নার্নাউলেও যুবকরা সড়ক অবরোধ করেছে। তেলেঙ্গানার সেকেন্দ্রাবাদ রেলস্টেশনে  অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এখানে সহিংস বিক্ষোভে একজনের মৃত্যু হয়েছে। অন্য একজনের মৃত্যু হয়েছে বিহারের লক্ষীসরাই জেলায়।   বিক্ষোভকারীরা রাজস্থানের ভরতপুর জংশন রেলস্টেশনে  পুলিশ সদস্যদেরকে রক্তাক্ত করেছে। বিক্ষোভ-আন্দোলনের কারণে ২০০টি ট্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আজ (শুক্রবার) সকাল ৫টা থেকে উত্তর প্রদেশের বালিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হয়। এখানে অনেক গাড়ির জানালার কাঁচ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ এব্যাপারে একজনকে আটক করেছে।

বিহারের ২৫টি জেলায় প্রচণ্ড তোলপাড় চলছে। বিক্ষোভকারীরা  সমস্তিপুরে দু’টি যাত্রীবাহী ট্রেন, লক্ষীসরাইয়ে দু’টি, আরা ও সুপৌলে  একটি করে যাত্রীবাহী ট্রেনে আগুন দেয়। একই সময়ে, বক্সার এবং নালন্দা সহ অনেক জেলায় রেলপথে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।  আরাতে সড়কে অগ্নিসংযোগের পর যানজট সৃষ্টি হয়েছে। বেতিয়ায় উপমুখ্যমন্ত্রী সিএম রেণু দেবীর সরকারি বাসভবনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। বৈশালীর হাজিপুর রেলস্টেশনে ভাঙচুর চালায় উত্তেজিত প্রতিবাদী যুবকরা। সমস্তিপুরে বিক্ষোভকারীরা জম্মু তাওয়াই-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস, বিহার সম্পর্ক ক্রান্তি  এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয়। হাজীপুর- বরাউনি রেল বিভাগে মহিউদ্দিননগর স্টেশনেও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। সকাল ৬টা থেকে রেল লাইনে অবস্থান করছেন আন্দোলনকারীরা। রেলওয়ে বিভিন্ন জায়গায় ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।  

গত ১৪ জুন (মঙ্গলবার) অগ্নিপথ প্রকল্পের ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। ওই প্রকল্পে সাড়ে ১৭/২১ বছরের তরুণ-তরুণীরা চার বছরের জন্য মাসিক ৩০/৪৫ হাজার টাকার চুক্তির ভিত্তিতে সশস্ত্র বাহিনীর তিন শাখায় (স্থল, নৌ এবং  বিমান) যোগ দিতে পারবেন। এদের বলা হবে ‘অগ্নিবীর’। সেনাবাহিনীতে শূন্যপদ ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চতুর্থ বছরের শেষে সেই ব্যাচের সর্বাধিক ২৫ শতাংশ ‘ অগ্নিবীর’কে সেনায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বাকিদের ১১/১২ লাখ টাকা হাতে দিয়ে পাঠানো হবে অবসরে। এ ক্ষেত্রে কোনও পেনশনের ব্যবস্থাও থাকবে না।খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে

news