মৃত শাবককে কবর দিল বুনো হাতির দল, মর্মস্পর্শী ঘটনার সাক্ষী থাকল ডুয়ার্স

 নালায় পড়ে গেছিল শাবক। রাতভর চেষ্টা চালিয়েও তাকে বাঁচাতে না পেরে মাটি চাপা দিয়ে জঙ্গলে ফিরল হাতির দল (Wild Elephant burries dead baby elephant)। বৃহস্পতিবার সকালে মর্মস্পর্শী এই ঘটনার সাক্ষী থাকল ডুয়ার্স।
চুনাভাটি চা বাগান (Tea Garden) থেকে কিছুটা দূরে রেতির জঙ্গল। সন্ধে পর্যন্ত সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছে হাতির (elephant) দলটি। রাতে ফের মৃত সন্তানের কবরের কাছে ফিরে আসতে পারে তারা, এই আশঙ্কায় রেতির জঙ্গল ও সংলগ্ন এলাকায় নজরদারি রেখেছে বন দফতর। শাবকটির দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গরুমারায় নিয়ে যাওয়া হয়।

রেতির ডায়না করিডর ধরে বুধবার রাতে দল বেঁধে যাচ্ছিল বুনো হাতির ওই দলটি। দলে ছিল ২০ থেকে ২৫টি হাতি। ভোররাতে চামুর্চি গ্রামপঞ্চায়েতের অন্তর্গত চুনাভাটি চা বাগানে ঢুকে পড়ে তারা। এই চা বাগানের একদিকে ডায়না আর অন্যদিকে রেতির জঙ্গল। সম্ভবত রেতির জঙ্গলে ঢোকার জন্যই চা বাগানের এই করিডরটি ব্যবহার করছিল হাতির দলটি। 

হাতির দলের উপস্থিতি টের পেয়েছিলেন চা বাগানের শ্রমিকরা। কিন্তু কী ঘটছে বুঝতে পারেননি। সকালে ৩৯ নম্বর সেকশনে কর্তব্যরত চা শ্রমিকরা দেখতে পান বাগানের জল নিকাশি নালা মাটি দিয়ে ঢাকা। মাটির সেই ঢিবি থেকে বেরিয়ে রয়েছে একটি হস্তি শাবকের পায়ের অংশ।
খবর পেয়ে ছুটে আসেন বিন্নাগুড়ি ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়াডের বনকর্মীরা। তাঁদের অনুমান, রাতে দলের সঙ্গে যাওয়ার সময় নিকাশি নালায় পড়ে গিয়েছিল আনুমানিক আট থেকে ন’মাস বয়সের হস্তি শাবকটি। তাকে নালা থেকে টেনে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিল হাতির দলটি। একে নালাটি গভীর, তার উপর হাতির পায়ের চাপে দু’পাশের নরম মাটি ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয় শাবকটির। সেই অবস্থায় শাবককে মাটি চাপা দিয়ে সমাহিত করে পাশে রেতির জঙ্গলে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে হাতির দলটি।

অনারারি ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন সীমা চৌধুরী বলেন, “মর্মান্তিক ঘটনা। ৮/৯ মাস বয়স হবে শাবকটির। মাটি চাপা অবস্থায় ছিল তার দেহ। আমাদের কর্মীরা দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গরুমারায় নিয়ে গেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।” 
বিন্নাগুড়ি ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়াডের রেঞ্জ অফিসার শুভাশিস রায় জানান, হাতির দলটি ঘটনাস্থল থেকে খুব কাছে রেতির জঙ্গলে রয়েছে। রাতে তারা মৃত শাবককে যে এলাকায় রেখে গেছে সেখানে ফিরে আসতে পারে। তাই জঙ্গল ও সংলগ্ন এলাকায় নজরদারি রাখা হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বর মাসেও প্রায় একই রকমের একটি ঘটনার সাক্ষী ছিল ডুয়ার্স। দেবপাড়া চা বাগানের নালায় পড়ে মৃত শাবককে সমাহিত করে জঙ্গলে ফিরে গিয়েছিল হাতির দল। তার আগে শাবকের দেহ বয়ে নিয়ে রেডব্যাঙ্ক চা বাগানে ঠায় তিনদিন দাঁড়িয়ে ছিল মা হাতি। সেই ঘটনায় চোখের জল ফেলেছিলেন চা বাগানের মানুষ।জলপাইগুড়ি সায়েন্স অ্যান্ড নেচার ক্লাবের সম্পাদক রাজা রাউতের কথায়, “হাতিরা খুবই সন্তানবৎসল। একের পর এক ঘটনা সেই স্নেহেরই নজির।”

খবর দ্য ওয়ালের/এনবিএস/২০২২/একে
 

news