এবার বদলে গেল দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুঘল গার্ডেনের নাম


ভারতে রাষ্ট্রপতি ভবনের উদ্যানের পর এবার বদলে গেল দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুঘল গার্ডেনের নাম। রাজধানী দিল্লিতে সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি ভবন চত্বরে অবস্থিত উদ্যান ‘মুঘল গার্ডেন’-এর নাম পরিবর্তন করে ‘অমৃত উদ্যান’ করেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার।   

এবার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নর্থ ক্যাম্পাসে অবস্থিত ‘মুঘল গার্ডেন’-এর নাম পরিবর্তন করে 'গৌতম বুদ্ধ শতবর্ষ উদ্যান’ করা হল। গতকাল (সোমবার) এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানান। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাফাইতে বলেছে উদ্যানটি মুঘল স্টাইলে ছিল না।  

প্রসঙ্গত, গত (শনিবার) রাষ্ট্রপতি ভবন তার বিখ্যাত মুঘল গার্ডেনের নাম পরিবর্তন করে 'অমৃত উদ্যান' করেছে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, রাষ্ট্রপতি ভবনের ‘মুঘল গার্ডেন’ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উদ্যানের নামকরণের সময়টি কেবল একটি কাকতালীয় এবং দীর্ঘ আলোচনার পরে উদ্যান কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রেজিস্ট্রার বিকাশ গুপ্তা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ ভাইস রিগাল লজের সামনে অবস্থিত উদ্যানের কেন্দ্রস্থলে গৌতম বুদ্ধের  মূর্তিসহ গৌতম বুদ্ধ শতবর্ষী উদ্যানের নাম অনুমোদন করেছে। গৌতম বুদ্ধের মূর্তি কমপক্ষে ১৫ বছর ধরে উদ্যানে রয়েছে।

এক কর্মকর্তা বলেন, উদ্যানটি মুঘলদের দ্বারা নির্মিত হয়নি বা এটি মুঘল উদ্যান শৈলীর নয়। মুঘল উদ্যানগুলো সাধারণত ইরানী স্থাপত্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি, যেখানে জলের স্রোত, সেইসাথে ফোয়ারা এবং জলপ্রপাত রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আজ (মঙ্গলবার) রেডিও তেহরানের শ্রোতা বিধান চন্দ্র স্যান্যাল প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতি হল মিশ্র সংস্কৃতি। আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতিতে রয়েছে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান। আমরা আমরা যদি ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে দেখি তাহলে দেখব শক-হুন-মোগল-পাঠান বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ যুগ যুগ ধরে ভারতে এসেছে এবং তারা ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে এক মিশ্র সংস্কৃতি তৈরি করেছিল। সেই কারণে যদি কবিগুরুর ভাষায় বলি ‘নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান।’ আমরা ভারতের সেই সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী। এটা অত্যন্ত দুঃখের যে, বর্তমান যে সরকার এই সরকার দেশের আপামর যে সমস্যা বেকারত্ব থেকে শুরু করে বিভিন্ন যে সমস্যা আছে  সেগুলোকে আড়াল করার জন্য আজকে তারা একপ্রকার সস্তা রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। আমরা দেখছি যে, বেছে বেছে কিছু কিছু মুসলিম নাম তারা সেগুলো তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছে।’  


বিধান বাবু আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি ভবনের যে মুঘল গার্ডেন, তার নাম পরিবর্তন করে যে নামই রখা হোক না কেন, তাতে তো মানুষের পেট ভরবে না। মানুষের কর্মসংস্থান হবে না। দেশের কল্যাণের জন্য কোনও কর্মসূচি হবে না। তাহলে এর প্রেক্ষাপট কী? প্রেক্ষাপট হল এই যে, এ সমস্ত নাম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে তথাকথিত জাতীয়তাবাদের ধুয়া তুলে তারা মানুষের মনকে বিভিন্ন সমস্যা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং ধর্মীয় আলোকে তারা সেটা করার চেষ্টা করছে। এটা আমাদের খুব খারাপ লাগে। আমরা এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায় মিলেমিশে বাস করি। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে মুসলিম সম্প্রদায় হিন্দুদের সঙ্গে কম লড়াই, সংগ্রাম করেনি। কিন্তু তাদের সেসব লড়াই, সংগ্রামকে যদি আজকে আমরা স্বীকার না করি, তাহলে ভারতীয় যে সংস্কৃতি, ভারতীয় যে ইতিহাস, যে ঐতিহ্য তার প্রতি কুঠারাঘাত করা হচ্ছে।’  


তিনি বলেন, ‘আসলে নাম পরিবর্তন করে দেশের সমস্যা মিটবে না। দেশের সমস্যা মেটানোর জন্য বাস্তব কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। এ ধরণের নাম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এক শ্রেণির সম্প্রদায়কে আঘাত করা নিশ্চয়ই যুক্তিযুক্ত হবে না। আমরা যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আছি, তারা আছি। সংখ্যালঘুকে ছোটো করে, তাদের বাস্তব মর্যাদাকে আঘাত করে আমরা কখনও উন্নয়ন বয়ে আনতে পারি না। আজকে ভারতবর্ষের যে অবস্থা চলছে তা সত্যি খুব দুঃখের। এবং এটা ভাববার বিষয় যে, এমনটা চলতে থাকলে আমাদের ‘নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান’ তা থেকে সরে আসতে হবে। আমাদের ভারতীয় যে ঐতিহ্য এতদিন যা ছিল সেক্ষেত্রে একটা বিরাট ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। এবং ভারতের ঐক্য ও সংহতিতে কুঠারাঘাত আসবে’ বলেও মন্তব্য করেন রেডিও তেহরানের শ্রোতা বিধান চন্দ্র সান্যাল।    


সম্প্রতি বিজেপিসাসিত মধ্য প্রদেশের হোশাঙ্গাবাদ রেল স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে ‘নর্মদাপুরম’ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকার হোশাঙ্গাবাদ জেলার নাম নর্মদাপুরম ঘোষণা করার পর থেকেই হোশাঙ্গাবাদ রেল স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে নর্মদাপুরম করার দাবি ওঠে। এরপরে স্টেশনটির নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত সম্বলিত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। রাজ্যটিতে এর আগে ২০২১ সালে হাবিবগঞ্জ রেল স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে রানী কমলাপতি স্টেশন করা হয়েছিল। হোশাঙ্গ শাহ (আল্প খান) (১৪০৬-১৪৩৫) ছিলেন মধ্য ভারতের মালওয়া সালতানাতের প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে নিযুক্ত সুলতান। হোশাঙ্গ শাহের সমাধি মধ্য প্রদেশের তাজমহল নামেও পরিচিত। নর্মদাপুর জয়ের পর হোশাঙ্গ শাহ গোরীর নামানুসারে হোশঙ্গাবাদের নামকরণ করা হয়।

এর আগে বিজেপিশাসিত উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদ রেলওয়ে স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে অযোধ্যা ক্যান্ট, মুঘলসরাই জংশনের নাম পরিবর্তন করে দীনদয়াল উপাধ্যায় জংশন, ইলাহাবাদ জংশনের নাম পরিবর্তন করে প্রয়াগরাজ জংশন করা হয়েছে।
খবর পার্সটুডে/ এনবিএস/ ২০২৩/একে

news