জবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে তোলপাড়

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে পরীক্ষার প্রশ্ন সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত শিক্ষক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জুয়েল কুমার সাহা। বিষয়টি প্রায় দুই মাস বিভাগে ধামাচাপা থাকলেও শেষ অব্দি প্রকাশ্যে চলে আসায় বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে চলছে তোলপাড়।

তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস উপাচার্যের। তবে ওই শিক্ষকের দাবি, হিংসার বশবর্তী হয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ছড়ানো হয়েছে বিষয়টি।

জানা যায়, গত ৪ ডিসেম্বর ওই শিক্ষকের কোর্সের (ক্লাসিকাল ইলেকট্রো ডাইনামিকস-১) মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেয়ার সময় পরীক্ষা চলাকালীন নকলসহ এক ছাত্রী ধরা পড়েন। তার নকলের সঙ্গে অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তরের মিল থাকায় বিভাগের শিক্ষকরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় ওই ছাত্রী শিক্ষক জুয়েল সাহার কাছ থেকে প্রশ্ন পাওয়ার কথা জানান।

তবে নিয়মানুযায়ী বিভাগ থেকে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানোর কথা থাকলেও সেটি করা হয়নি। বরং বিভাগীয় একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে ঐ শিক্ষককে সকল-ক্লাস পরীক্ষা থেকে ৩ বছরের জন্য মৌখিকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

তবে, এ বিষয়ে বিভাগের শাস্তির এখতিয়ার নেই বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, সাধারণত সিন্ডিকেট সভায় এসব বিষয়ে শাস্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এ দিকে বিভাগেই প্রায় দুই মাস ঘটনাটি চাপা থাকার পর অতি সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসে। এতে করে সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য। ওই শিক্ষকের সাথে ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্কের দাবিও করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও অভিযোগ উঠে বিভাগীয় চেয়ারম্যান ওই শিক্ষককে বাঁচাতেই বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, এই ঘটনার পর শিক্ষক শাস্তির মুখোমুখি হবেনা সেটি হতে পারেনা। আমাদের বিভাগ একটি ব্যতিক্রমী বিভাগ। কিন্তু এ ঘটনায় আমাদের বিভাগের নাম কলুষিত হয়েছে। ফাইনাল ইয়ারের র‌্যাগ ট্যুর থেকে সবকিছুর সূচনা হয়েছিল। সেখানেই আপুর সাথে স্যারের সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। যার মাত্রা ক্রমান্বয়ে বেড়ে পরীক্ষার হলেও এসেছে।

এ বিষয়ে বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আঞ্জুমান আরা বলেন, এটা বিভাগের অভ্যন্তরীণ বিষয় দেখিয়ে চেয়ারম্যান আমাদের কাছ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ নেননি। এরপর বিভাগের একাডেমিক মিটিংয়ে সব শিক্ষকের কাছ থেকে মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষককে তিন বছরের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

বিভাগের ২য় বর্ষের পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. কানিজ ফাতেমা কাকলী বলেন,আমি বিষয়টি জানার পরপরই বিভাগের চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। এরপর বিভাগের সব শিক্ষকরা একাডেমিক মিটিংয়ে তাকে তিন বছর ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু আমি লিখিত অভিযোগের কথা বললে বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন, বিভাগের বিষয় বিভাগেই সুরহা হোক।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুল্লাহ বলেন, দায়িত্বরত শিক্ষক কিংবা পরীক্ষা কমিটির আহবায়ক আমাকে কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি। এজন্য প্রশাসনকে বিষয়টি জানাতে পারিনি। এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে অবগত। আমি চাই সঠিক তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হোক।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক জুয়েল সাহা বলেন, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সঠিক ঘটনা সকলের সামনে উপস্থাপন হোক। আমার বিরুদ্ধে উঠা সকল অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। প্রশ্ন ফাঁসের মতো কোন ঘটনা আমার বিভাগে ঘটেনি। আমার গবেষণা এবং একাডেমিক কাজ কেউ ভালোভাবে না নিতে পেরে আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দিচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন,বিষয়টি জেনেছি। অভিযোগ সাপেক্ষে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব বিষয়ে কোন ছাড়া দেয়া হবেনা।

এনবিএস/ওডে/সি

news