তৈরি হচ্ছে শক্তিশালী সাইক্লোন, কবে আছড়ে পড়বে মোকা?

বঙ্গোপসাগরে তৈরি হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় মোকা। আমফানের স্মৃতি এখনও তাজা। মুছে যায়নি ইয়াসের ভয়ঙ্কর মুহূর্তগুলো। এরই মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে তৈরি হতে চলেছে ঘূর্ণাবর্ত।

রোববার (৭ মে) ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপে পরিণত হবে। নিম্নচাপ আরও ঘনীভূত হবে সোমবার। এরপর এই সিস্টেম মধ্য বঙ্গোপসাগরের দিকে এগোবে, যার অভিমুখ থাকবে উত্তরে। মঙ্গলবার (৯ মে) গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে মধ্য বঙ্গোপসাগরে। ভারতের মৌসম ভবন সিস্টেমের উপর নজর রাখলেও এখনও তার গতিপথ সুনিশ্চিত নয়। বর্তমান পরিস্থিতি সেদিকেই ইঙ্গিত করছে।

আবহাওয়াবিদ থেকে শুরু করে প্রশাসন, সকলেরই নজর সেইদিকে। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে এ দিন। যা ক্রমশই শক্তি বাড়িয়ে আগামী ৯ মে তৈরি হবে সাইক্লোন মোকায়। সতর্ক নজরদারি চলছে উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে। তবে বঙ্গবাসীর প্রশ্ন রাজ্যে কতটা গতিবেগে আছড়ে পড়তে পারে এই মোকা? কতটাই বা প্রভাব ফেলবে সে? আমফান কিংবা ইয়াসের মতো কি তাণ্ডব চালাবে এই মোকাও? ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এই সিস্টেমের নাম হবে মোকা। এই নামকরণ করেছে আরব সাগরের দেশ ইয়েমেন।

মৌসম ভবনের তরফে সতর্কতা জারি করে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যেই আন্দাজ করা সম্ভব হবে, কোনদিকে হতে পারে মোকার গতিপথ? কোন রাজ্যের উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে এই সাইক্লোন। আবহাওয়া সংক্রান্ত দু’টি মডেল গ্লোবাল ফোরকাস্টিং সিস্টেম এবং ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়াম রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্টকে ব্যবহার করা হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে এই ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি অনুধাবন করতে।

শনিবার একদিকে যখন ঘূর্ণবার্ত তৈরি হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে, অন্যদিকে তখন এ শহরের আকাশও সকাল থেকেই মেঘলা। দিনভর এমনই পরিস্থিতি থাকার কথা জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর। এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে মোকার প্রভাব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেনি হাওয়া অফিস। তবে শোনা যাচ্ছে, আগামী ৯ মে এর আগে এ রাজ্যে ঘূর্ণিঝড়ের তেমন কোনও প্রভাব থাকবে না। বরং আগামী ৭২ ঘণ্টায় তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে রাজ্যে। বাড়বে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তিও।

আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার কলকাতা শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের থেকে এক ডিগ্রি কম। শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিক। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ ৫১ থেকে ৮৫ শতাংশের মতো। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়নি। শনিবারও ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই কলকাতায়।

শনিবার দক্ষিণবঙ্গের দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর এবং নদিয়াতে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বাকি জেলাগুলিতে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস নেই। কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা তিন থেকে পাঁচ ডিগ্রি পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে ভিজতে পারে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি। উত্তরবঙ্গের প্রতিটি জেলাতেই শনিবার বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া।

সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের কথা মাথায় রেখে শনিবারই বিশেষ কন্ট্রোল রুম খোলা হবে লালবাজারে। শহরের আবহাওয়াজনিত পরিস্থিতির উপরে নজরদারি চালাবে কলকাতা পুলিশ। ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে লালবাজারের তরফে শহরের সব থানা এবং ট্র্যাফিক গার্ডকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুলিশের নিজস্ব বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং NDRF-কেও তৈরি রাখা হচ্ছে।

বিদ্যুৎব্যবস্থা সচল রাখতে এবং ঝড়ের সময় কোনও খুঁটি থেকে খোলা তারে যেন বিপত্তি না বাড়ে তার জন্য CESC-কে বার্তা পাঠিয়েছে লালবাজার। সবরকম প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে কলকাতা পুরসভাও। ঝড়ের সময় গাছ ভেঙে পড়লেও তা দ্রুত সরিয়ে ফেলার জন্য পর্যাপ্ত বন্দোবস্ত রাখা হচ্ছে। মোকার প্রভাবে পর্যটকদের জন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে ইতমধ্যেই।

সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল গুলোতে সমস্ত বিনোদনমূলক কার্যক্রম বন্ধ রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ে ভেসেল না চালানোর পরামর্শও দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় শুরু হতে পারে রোববার থেকেই। নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ভারী বৃষ্টির সতর্কতা থাকবে আন্দামানেও। রোববার থেকে মঙ্গলবার তুমুল বৃষ্টি হতে পারে এই দুই দ্বীপপুঞ্জে। সঙ্গে বইবে তুমুল হাওয়া। সোমবার যার গতিবেগ ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে বলে অনুমান আবহাওয়াবিদদের।

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ সংলগ্ন সমুদ্রে সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। যারা সমুদ্রে রয়েছেন, তাদের রোববার বিকেলের মধ্যে উপকূলে ফিরে আসতে পরামর্শ দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

এনবিএস/ওডে/সি

news