অপরাধ জগতে মাফিয়া, গুন্ডা, ডন  শব্দ যুক্ত হওয়ার নেপথ্যে

সম্প্রতি সাবেক বিধায়ক ও অভিযুক্ত গ্যাংস্টার মুখতার আনসারি ভারতের উত্তরপ্রদেশের বারাবাঁকির একটি স্থানীয় আদালতে পিটিশন দায়ের করেন। তার বক্তব্য, মিডিয়ায় তার সম্পর্কে ব্যবহৃত বহুল প্রচারিত ‘মাফিয়া ডন’, ‘বাহুবলী’ প্রভৃতি শব্দগুলো শুধু ‘অশ্লীল’ই নয়, এই ধরনের শব্দচয়নে তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং আদালতে তার বিরুদ্ধে চলা বিচার প্রক্রিয়াকেও প্রভাবিত করতে পারে। কিন্তু কীভাবে এই শব্দগুলো রাজনৈতিক অভিধানে জায়গা করে নিল? কেন এবং কোন প্রসঙ্গে আজ এই শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়?

ভাষাবিদদের মতে ‘মাফিয়া’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি ইতালিয়ান ভাষায়। ইতালিয়ান থেকে ইংরেজি ভাষায় শব্দটির অনুপ্রবেশ ঘটার পরেই ক্রমে তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আঠেরো শতকে কুখ্যাত অপরাধীরা সংগঠিত হয়ে কোনও মারাত্মক অপরাধ করলে তাদের ‘মাফিয়া’ বলে অভিহিত করা হত। সিসিলি ও যুক্তরাষ্ট্রে এদের দেখা যেত সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সাতের দশকে খ্যাতনামা সাহিত্যিক মারিও পুজোর উপন্যাস ‘গডফাদার’ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে সারা পৃথিবীতে এই ‘মাফিয়া’ শব্দটির জনপ্রিয়তা বিপুল হারে বেড়ে যায়।

সম্প্রতি ভারতে আতিক আহমেদ হত্যা মামলাতেও এই শব্দটি উঠে আসে সংবাদ শিরোনামে। বিস্ময়ের বিষয়, এই ‘মাফিয়া’ শব্দটি হিন্দি তো বটেই কোনও ভারতীয় ভাষার সঙ্গেই সম্পর্কিত নয়। তবুও এই শব্দটি দেশের বাজারে চলছে রমরমিয়ে।

‘ডন’ শব্দটিও ইতালিয়ান। এই শব্দের অর্থ বস বা লিডার। এই ডন নিয়ে বলিউডে অনেক সিনেমাও হয়েছে। ১৯৭৮ সালে অমিতাভ বচ্চন এই নামেই সিনেমা করেছেন, পরবর্তীকালে যার রিমেক করেছেন শাহরুখ খান।

ভারতে সাধারণত বিহার ও উত্তরপ্রদেশে ‘গুন্ডা’ শব্দটি লোকমুখে বিশেষভাবে ব্যবহৃত। ‘গুন্ডা’ বলতে সেইসব অপরাধীদের বোঝানো হয়, যারা গায়ের জোরে, চাপ দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তোলা আদায় করে বা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে মারপিট করে এমনকি খুন-খারাপি পর্যন্ত করে বসে। উত্তরপ্রদেশে অবশ্য ‘গুন্ডা’ ও ‘গ্যাংস্টার’ শব্দ দু’টিকে দু’টি আলাদা প্রসঙ্গে ব্যবহার করা হয়।

‘গুন্ডা’ শব্দের ব্যুৎপত্তি নিয়ে অবশ্য ভাষাবিদদের মধ্যে মতান্তর আছে। কেউ কেউ মনে করেন পশতু বা ইংরেজি থেকে এই শব্দটি এসেছে, যদিও পশতু থেকে শব্দটি যে এসেছে এর কোনও উপযুক্ত প্রমাণ নেই। বরং ইংরেজি ‘গুন’ থেকে এসেছে ‘গুন্ডা’ শব্দটি, এমনটাই তাদের অভিমত। তারা মনে করেন শব্দটি বিহার বা উত্তরপ্রদেশ নয়, বরং ছত্তিসগড় জুড়ে বহুল প্রচলিত। কারণ সেখানে ব্রিটিশরাই শব্দটি চালু করে স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা ব্রিটিশ শাসকের ত্রাস, বীর গুন্ডা ধুরের নামে।

অনেকের আবার ধারণা গুন্ডা শব্দটির উৎস দ্রাবিড়ভূমে। তাদের মতে ‘গুন্ডা’ শব্দটি নেতিবাচক অর্থে একেবারেই ব্যবহৃত হয় না। বরং শব্দটি উন্মেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়। ফলে তা মূলত ব্যবহার করা হত রাজা বা তার বীর সেনানীদের উদ্দেশ্যে।

ঘটনাচক্রে ‘বাহুবলী’ শব্দটিও দ্রাবিড়ভূমে ব্যবহৃত হত সাহসিকতার প্রতীক হিসেবে। কিন্তু কালের নিয়মে তার অর্থ হয়ে গেল এমন একজন ব্যক্তি যিনি তার শক্তি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অন্যদের উপর ছড়ি ঘোরান বা নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অন্যদের দাবিয়ে রাখেন। সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা

এনবিএস/ওডে/সি

news