যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, দক্ষিণ এশিয়ায় নিয়ন্ত্রক হিসেবে ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে ভারত 

দ্য থার্ড পোলের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক (দক্ষিণ এশিয়া) ওমায়ের আহমেদ তার এই লেখার উপশিরোনামে বলেছেন, জবাবদিহি, মানবাধিকার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করছে যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে ভারত সরকারের নীরবতায় বোঝা যাচ্ছে যে, দেশটির মর্যাদা কমতে শুরু করেছে। 

তিনি লিখেছেন, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর থেকে বিষয়টি স্থান করে নিয়েছে রাজনীতির মাঠে। এই ভিসানীতির সারকথা, বাংলাদেশে কেউ অবাধ নির্বাচনে বাধা প্রদান করলে যুক্তরাষ্ট্র তাকে ভিসা দেবে না। 

২০০৯ সাল থেকে দেশের ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি বিএনপির জন্য করা হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি পরিস্কার হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা প্রত্যাশা করছে এবং নতুন ভিসানীতির প্রাথমিক লক্ষ্য আওয়ামী লীগ। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্যক্তিগতভাবে বিপাকে ফেলেছে, যিনি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র‌্যাব) ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। 

মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় আওয়ামী লীগ সরকার। ভিসানীতি ঘোষণার ১১ দিন আগে শেখ হাসিনা স্পষ্ট ভাষায় বলেন, স্যাংশন আরোপকারী দেশগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশ কিছুই কিনবে না। 

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের মধ্যে সমঝোতার মনোভাব পরিলক্ষিত হয়। দু’সপ্তাহের মধ্যেই তারা বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপের ইঙ্গিত দিতে শুরু করেন। এতে প্রমাণ হয়, ভিসানীতি ‘কাক্সিক্ষত’ কাজ করতে শুরু করেছে। 

এই ঘটনাপ্রবাহে সবচেয়ে বড় বিষয়টি হচ্ছে ভারত সরকারের নীরবতা। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা ভারত সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনো অবস্থান নেবেন না। এমনকি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলাদেশী অভিবাসীদের উইপোকা হিসেবে অভিহিত করার পরও না। 

এর মধ্যে আদানি গ্রুপের সঙ্গে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি করেছে বাংলাদেশ, যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের একজন বিশ্লেষক এভাবে বিষয়টা দেখছেন যে, এ ধরনের কোম্পানির সঙ্গে সঙ্গে থাকলে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের আনুকূল্য পাওয়া সহজ হয়। 

নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের দুর্বল হয়ে পড়ার মধ্যে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির কোনো স্বার্থ নেই, ভারতেরও না। ২০১৮ সালের নির্বাচনে পর ভারত ও চীন আগ্রহভরে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানায়, যদিও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ওই নির্বাচনে ৫০টি আসনের মধ্যে ৪৭টিতেই ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন দেখা গেছে। ওই নির্বাচনের ফলাফলের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের আপত্তি ছিলো। এবার মনে হচ্ছে, তারা আরো সক্রিয়ভাবে নির্বাচন নিয়ে কাজ করবে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, আমাদের কোনো ধারণা নেই, বিষয়গুলো নিয়ে ভারতের সঙ্গে কোনো না কোনো ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কথা হয়েছে কি না। যদি না হয়ে থাকে, তাহলে ধরে নিতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, ভারত ঘটনাচক্রে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এবং অবাধ নির্বাচনের পথে ভারত একটি বাধা হয়ে দাঁড়াবে। 

আর যদি র‌্যাবের ওপর স্যাংশন এবং নতুন ভিসানীতি প্রসঙ্গে  ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা হয়ে থাকে এবং এ নিয়ে ভারত মুখ বন্ধ রাখে, তাহলে ধরে নিতে হবে; ভারত সরকার মনে করে প্রতিবেশির সঙ্গে এই খেলায় তারা প্রধান নয়, দ্বিতীয় শক্তি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে নরেন্দ্র মোদির সর্বশেষ সফরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভারতের সঙ্গে সমতাভিত্তিক সম্পর্কের কোনো আচরণই প্রদর্শন করেননি।সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা

 এনবিএস/ওডে/সি

news