কান চলচ্চিত্র উৎসব: পশ্চিমাদের ইসলাম বিদ্বেষী একটি রাজনৈতিক মঞ্চ

৭৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসব আবারো খবরের শিরোনামে। উৎসবে বিজয়ীদের নাম এমনভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে যেখানে পেশাদারিত্বের কোনো ছাপ ছিল না। বরং অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়েছে যে উৎসবের এ মঞ্চটিকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে।

এবারে কান চলচ্চিত্র উৎসবে চারটি দিক রয়েছে। প্রথমত: উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির ভাষণ ছিল একটি ব্যতিক্রমি ও নজিরবিহীন ঘটনা। বিশ্ব চলচ্চিত্র ও উৎসবের রীতিনীতি ও আইনের প্রতি তোয়াক্কা না করে উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তিনি যুদ্ধ এবং সিনেমার অজুহাতে অনলাইনে ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তার দেশ এবং  জনগণের বিরুদ্ধে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান নিয়ে কথা বলেন। প্রকৃতপক্ষে, জেলেনস্কি যুদ্ধের চলচ্চিত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো শিল্পী বা অভিনেতা হিসাবে নয়, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা-সমর্থিত নেতা হিসাবে সেখানে বক্তব্য দিয়েছেন। কারণ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলো রুশ নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ায় জেলেনেস্কি এ সুযোগ পেয়েছেন।  

এখানে দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে চলচ্চিত্র মূল্যায়নে শৈল্পিক এবং পেশাদার উপাদানগুলোকে আমলে নেয়া হয় নি।  মূলত শিল্প ও পেশাদার প্রতিযোগিতায় এ ধরনের চলচ্চিত্র উৎসবের প্রধান দার্শনিক ভিত্তি  হলো  বিশ্বের দেশগুলোর গৌরবময় সৃষ্টিশীলতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করা। গত ৭৫ বছর ধরে অনুষ্ঠিত কান চলচ্চিত্র উৎসবের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এবং আমরা যতই এগিয়ে যাচ্ছি, দেখতে পাচ্ছি যে এ উৎসবের আমেজ এবং এখানে প্রদর্শিত চলচ্চিত্রগুলোর শৈল্পিক মূল্য এবং এগুলোর পেশাদার দিক অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। কান উৎসবে প্রদর্শিত কিছু চলচ্চিত্রে বিশেষ করে ইরানী পরিচালক এবং অভিনেতাদের সংশ্লিষ্ট থাকা চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তুতে কম শৈল্পিক উপাদান দেখতে পাই। বরং আমরা এসব চলচ্চিত্রে ইরানী সমাজের একটি বিকৃত এবং ধ্বংসাত্মক চিত্র দেখতে পাই যা বর্তমান বাস্তবতার সাথে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে কান চলচ্চিত্র উৎসব এবং সেখানে প্রদর্শিত সিনেমাগুলোর বিষয়ে ইরানি সমাজের নানা শ্রেনীর মানুষ তাদের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। 

তৃতীয়ত তৃতীয়; ফ্রান্সের ৭৬ তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে পশ্চিমাদের বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলির ধর্মবিরোধী পদক্ষেপ বা অবস্থানের ধারাবাহিকতা পরিলক্ষিত হয়েছে। "হলি স্পাইডার" নামে যে চলচ্চিত্রটি উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিল এবং এর অভিনেত্রীকে সেখানে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার দেয়া হয়েছে এটি কুখ্যাত ইসলাম বিদ্বেষী "সালমান রুশদি"র স্যাটানিক ভার্সেস এবং ইউরোপের দেশগুলোতে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ধারাবাহিকতার অংশ। "হলি স্পাইডার" ছবিতে পবিত্র শহর মাশহাদে শিয়াদের অষ্টম ইমামের পবিত্র মাজারের অবমাননা দেখানো হয়েছে। আসল কথা হলো ইউরোপীয় দেশগুলোর মানুষের মধ্যে ইসলামফোবিয়া বেড়ে গেছে। ইউরোপীয় সরকারগুলো ইসলামের নবী (সা.) এবং শিয়া ইমামদের অবমাননাসহ বিভিন্ন রূপে ইসলাম বিরোধীতাকে তাদের এজেন্ডায় রেখেছে। ফলে বিষয়বস্তু বিহীন এবং নূন্যতম শৈল্পিক সৃজনশীলতার উপস্থিতি নেই কেবল ইসলাম ধর্মের অবমাননার উদ্দেশ্যে নির্মিত সিনেমাগুলো সেখানে মুক্তি দেওয়া হয়।পশ্চিমাদের এসব নীতি সারা বিশ্বের মুসলমানদের বিশেষ করে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ধর্মপ্রাণ মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করছে। 

চতুর্থ: কান চলচ্চিত্র উৎসবসহ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক শিল্প উৎসব গুলোর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে এসব উৎসব সরকারি নীতি থেকে স্বাধীন নয় এবং পশ্চিমা সরকারগুলি বিশেষকরে ইহুদিবাদী লবিষ্ট এসব উৎসবের প্রধান নিয়ন্ত্রক।।খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে

news