সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসিঞ্জার মারা গেছেন

বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী মার্কিন কূটনীতির প্রতীক ছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১০০ বছর। স্থানীয় সময় বুধবার (২৯ নভেম্বর) রাতে কিসিঞ্জার অ্যাসোসিয়েটসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে তার মৃত্যুর খবর জানানো হয়। এতে বলা হয়, কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান।

১৯২৩ সালের ২৭ মে জার্মানির এক ইহুদি পরিবারে জন্ম নেন কিসিঞ্জার। পরে ১৯৩৪ সালে তার পরিবার পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যায়। ওই শহরেই বেড়ে ওঠেন কিসিঞ্জার। ১৯৪৩ সালে কিসিঞ্জার মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপে মার্কিন সামরিক বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫২ সালে মাস্টার ডিগ্রি  এবং  ১৯৫৪ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও জেরাল্ড ফোর্ড উভয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার। তার দীর্ঘ কুটনীতি নিয়ে খ্যাতি ও বিতর্ক উভয়ই রয়েছে।

চীন মার্কিন কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের মূল কারিগর হিসেবে মনে করা হয় হেনরি কিসিঞ্জারকে। এ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা পিংপং কুটনীতি হিসেবে খ্যাতি লা। করেছে। এছাড়া স্বাধীনতার পর কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন।

কম্বোডিয়া ও লাওসে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সম্প্রসারণ, চিলি ও আর্জেন্টিনায় সামরিক অভ্যুত্থানে সমর্থন, ১৯৭৫ সালে পূর্ব তিমুরে ইন্দোনেশিয়ার রক্তক্ষয়ী অভিযানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন কিসিঞ্জার। এছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যাপক নৃশংসতার বিষয়ে চোখ বন্ধ রাখার  অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

কিসিঞ্জারের নানা বিতর্কিত ভূমিকার জন্য অনেকে তাকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলে অভিযুক্ত করে থাকেন। তবে বিশ্বের নানা প্রান্তে যুদ্ধ-সংঘাতের ‘কারিগর’ হলেও কিসিঞ্জারকে কখনো সেভাবে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি।

শতাব্দীব্যাপী সক্রিয় ছিলেন কিসিঞ্জার। হোয়াইট্ হাউসের বৈঠকে যোগদান, বই প্রকাশ এবং উত্তর কোরিয়ার পারমানবিক হুমকির বিষয়ে সিনেট কমি্িটতে সাক্ষ্য দান করেন তিনি। চলতি বছরের জুলাই মাসে আকস্মিক সফরে চীন যান তিনি। এ সময় কিসিঞ্জার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন।

রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের আমলে ১৯৭০ এর এক দশক ধরে সংঘটিত যুগান্তকারি বৈশ্বিক ঘটনাবলীর সময় তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। চীন-মার্কিন কুটনীতি, মার্কিন-সোভিয়েত অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আলোচনা,  ইসরায়েল ও তার আরব প্রতিবেশিদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন এবং উত্তর ভিয়েতনামের সঙ্গে প্যারিস শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন কিসিঞ্জার।

১৯৭৪ সালে প্রেসিডেন্ট নিক্সন পদত্যাগ করার পর মার্কিন কূটনীতির মূল কারিগর কিসিঞ্জার তার দায়িত্বে বহাল থাকেন। এমনকি মৃত্যুর আগ পর্যন্তু তিনি কূটনৈতিক বিষয়ে নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করা অব্যাহত রেখেছিলেন। সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা

এনবিএস/ওডে/সি

news