গাজায় নিরাপদ জায়গা নেই, ৭৯ যান ধংস, ইসরায়েলের কঠোর সমালোচনা করলেন ব্লিঙ্কেন
ইসরায়েল এখন দক্ষিণ গাজাও আক্রমণ করছে। ফলে ফিলিস্তিনিদের কাছে নিরাপদ আশ্রয় বলে আর কিছু নেই। দক্ষিণ গাজাতেই লাখ লাখ ফিলিস্তিনি উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে এসেছেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।
গাজার তরুণ শিল্পপতি হানা আওয়াদ বলছিলেন, 'আমরা এমন একটা পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি, যেখানে আমাদের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। চাকরি হারিয়েছি, পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছি, বাড়িঘর হারিয়েছি, এমনকী নিজেদের শহরও হারিয়ে ফেলেছি।
ইসরায়েলের সেনা এখন খান ইউনিস শহর ঘিরে অভিযান চালাচ্ছে। শহর থেকে মানুষকে পশ্চিমদিকে বা রাফাহর দক্ষিণে চলে যেতে বলা হচ্ছে। কিন্তু লড়াই বন্ধ করা হচ্ছে না। ইসরায়েলের দাবি, হামাস নেতারা এই শহরেই আছে।
যুদ্ধবিরতির সময় রাফাহ সীমান্ত দিয়ে কিছু মানবিক ত্রাণ এসেছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তাই মানুষের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ হচ্ছে না।
জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কোঅর্ডিনেশন অফ হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স(ইউএনওসিএইচএ) জানিয়েছে, গাজার ২২ লাখ মানুষের মধ্যে ১৮ লাখ মানুষ এই যুদ্ধের ফলে মাথার উপর ছাদ হারিয়েছে। অনেকেই দক্ষিণ গাজায় চলে গেছেন। সেখানে জাতিসংঘের আশ্রয়শিবিরে আর ঠাঁই নেই। অনেকে গাড়িতে থাকছেন, আত্মীয়দের সঙ্গে গাদাগাদি করে থাকছেন।
এদিকে গাজায় ভারতীয় বংশোদ্ভুত এক ইসরায়েলি সেনা ঘিল দানিয়েলে (৩৪) নিহত হয়েছেন। তিনি মাস্টার সার্জেন্ট পদমর্যাদার সেনা। নিহত হয়েছেন যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার মন্ত্রী ও সাবেক সেনাপ্রধান গাদি আইজেনকটের ছেলে গ্যাল মায়ার আইজেনকট ও সেনা সদস্য জোনাথান ডেভিড ডিচ। এ নিয়ে ৪শ ইসরায়েলি সেনা নিহত হল।
এবার ইসরায়েলের এইলাতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। হুথিদের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানান, ইসরায়েলের সেনাদের লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছে, বুধবার সকালে মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ আরলে বার্ক ক্লাস ডেস্ট্রয়ার একটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এ ড্রোনটি ইয়েমেনের হুতিদের এলাকা থেকে ছোড়া হয়েছিল। এ নিয়ে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ৬ বার লোহিত সাগরে হামরলার মুখে পড়ল।
হুতিরা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা আরব সাগর ও লোহিত সাগরে ইসরায়েলি জাহাজ চলাচল করতে দেবে না।
গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৭ হাজার ১৭৭ ছাড়িয়েছে। চলমান এ যুদ্ধে ৪৬ হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে বেশিরভাগ নারী ও শিশু।
ইসরায়েলকে দফায় দফায় সতর্ক করার পর দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীরে সহিংসতার জন্য দায়ী চরমপন্থিদের ওপর এ ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে বেলজিয়াম।
এদিকে গত ৭২ ঘণ্টায় ৭৯ ইসরায়েলি যান ধ্বংস করা হয়েছে। হামাসের সামরিক শাখা আলকাসেম ব্রিগেড জানিয়েছে, তাদের হামলায় এসব যানবাহনের কোনোটা আংশিক আবার কোনোটা পরিপূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। গাজার শেখ রাদওয়ানের পার্শবর্তী এলাকায় ট্যানেলের মুখে বুবি ট্রাপ ফাঁদ পাতা হয়েছে। ইসরায়েলের সেনারা সামনে আগাতে এসব ফাঁদে আটকা পড়ছেন।
কাসেম ব্রিগেড আরও জানিয়েছে, তারা গাজায় স্থল অভিযানের সেনাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এসব সেনা গাজার উত্তরাঞ্চলের বেইত লাহিয়াতে একটি বাসায় অবস্থান নিয়েছিলেন। তাদের এ হামলায় বেশ কয়েক সেনা আহত হয়েছে।
এদিকে গাজায় ইসরায়েলের আচরণের কঠোর সমালোচনা করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তিনি বলেছেন, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতে এবং হতাহতের ঘটনা এড়াতে ইসরায়েল সরকার যে লক্ষ্যের কথা বলেছিল, তার সঙ্গে তাদের আচরণে ফারাক থেকে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও আলাদা করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং হামাস থেকে বেসামরিক নাগরিকদের আলাদা করার ওপর জোর দিয়েছেন। সংঘাতের এলাকাগুলো থেকে সাধারণ মানুষ নিরাপদে সরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন বাইডেন।
গাজা সিটিতে এক বাড়িতে দখলদার ইসরায়েলের জঙ্গি বিমানের হামলায় ৩০ জন ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। এছাড়া গাজার হালাব স্কুলেও জঙ্গি বিমান থেকে বোমা ফেলা হয়েছে।
গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে হামাস ও ইসলামি জিহাদের যোদ্ধাদের সংঘর্ষ চলছে। গাজা শহরের দক্ষিণের আল-সুজাইয়া এলাকায় ইসলামি জিহাদের সামরিক শাখা আল-কুদস ব্রিগেডস দখলদার বাহিনীর ওপর ব্যাপক হামলা চালিয়েছে।
লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর প্রভাবশালী নেতা নাবিল কাউক বলেছেন, একশ’ দিন যুদ্ধ করার পরও গাজায় কোনো লক্ষ্যই হাসিল করতে পারবে না ইসরায়েল। প্রতিরোধ সংগ্রামীরা গাজাকে একা ছেড়ে দেবে না। এ প্রসঙ্গে তিনি গাজার সমর্থনে ইসরাইলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহর যুদ্ধ, ইয়েমেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, সাগরে প্রতিরোধ এবং ইরাক থেকে মার্কিন স্বার্থে আঘাত হানার কথা তুলে ধরেন।
এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইবরাহিম রায়িসি রাশিয়া সফরে রয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়া সফরকালে তিনি গাজায় বোমা হামলা বন্ধ, গাজা অবরোধ প্রত্যাহার ও ফিলিস্তিনে সাহায্য পৌঁছানোর বিষয়ে আলোচনা করবেন এবং এ বিষয়ে চেষ্টা চালাবেন।