কানাডার নির্বাচনে ভারত ও চীনের হস্তক্ষেপের অভিযোগ 

চীনের এক উচ্চ বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে লিবারেল পার্টির প্রার্থীকে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। নির্বাচনে হাজার হাজার ডলার ঢেলেছে চীন যদিও এর পরিমাণ এখনও স্পষ্টভাবে জানা যায়নি। ভারত সরকারের এক প্রক্সি এজেন্ট কানাডায় ভারতপন্থী রাজনীতিবিদদের অবৈধভাবে অর্থায়ন করছে।’

বিবিসি জানায়, এমন অনেক অভিযোগ উঠে এসেছে কানাডার নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়ে তদন্তে। গত দুই সপ্তাহ ধরে কানাডায় এই মামলার শুনানি চলছে।

একই সঙ্গে কানাডিয়ান সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস বা সিএসআইএস-এর তরফে সতর্ক করে বলা হয়েছে, পেশ করা প্রতিবেদনে এমন তথ্য থাকতে পারে যা একটি মাত্র উৎস থেকে জানা গিয়েছে, তথ্য অসম্পূর্ণ কিংবা পুরোপুরি পরীক্ষা করা হয়নি।

সাম্প্রতিকালে চীন ও ভারতের বিরুদ্ধে কানাডার বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। ভারত অবশ্য এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। চীনও অস্বীকার করেছে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ।

রিপোর্টে যা বলা হয়েছে: তদন্তের সময় কানাডায় বসবাসকারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সদস্যদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এতে প্রবাসীদের নিজের দেশের সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত এজেন্টদের থেকে ঝুঁকির অভিযোগের কথা প্রকাশ্যে এসেছে।

 তদন্তের নেতৃত্বে রয়েছেন বিচারক মারি-জোসি হগ। আগামী মাসে এই তদন্তের প্রথম প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগে তিনি উল্লিখিত সম্প্রদায়ের ৪০ জন সদস্য, রাজনীতিবিদ এবং নির্বাচনি কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য শুনেছেন।

তদন্ত কমিটির সামনে বুধবার হাজির হবেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তদন্ত কমিটির সমস্ত প্রশ্নের জবাব দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে, বিদেশি হস্তক্ষেপের যে অভিযোগ উঠেছে তার ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করেছেন সিএসআইএস এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা হয় এই বিষয়টি মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেননি বা তাদের (ক্ষতিগ্রস্তদের) অন্ধকারে রেখেছেন।

কানাডার নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা বলেছে যে এই ইস্যু মোকাবেলা করার জন্য সরকার যা করছে তা যথেষ্ট নয়। 

এখন পর্যন্ত সাক্ষ্য এবং আংশিকভাবে গোপনীয় নথি থেকে জানা গিয়েছে এমন কিছু উপায়ের কথা যা ব্যবহার করে কানাডার ২০১৯ এবং ২০২২ সালের নির্বাচনে চীনা বা বিদেশি সরকারগুলি হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে থাকতে পারে।

 সিএসআইএস অভিযোগ করেছে ২০১৯ ও ২০২২ সালের নির্বাচনে চীনা সরকার ‘গোপনীয়ভাবে এবং প্রতারণা করে’ হস্তক্ষেপ করেছিল।

ওই সংস্থা একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, “অনলাইন ও গণমাধ্যমের কার্যকলাপ লক্ষ্য করে আমরা জানতে পেরেছি, চীনা বংশোদ্ভূত কানাডীয়দের কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক নেতা এরিন ও’টুলকে সমর্থন না করতে বলা হয়েছে।”

গত সপ্তাহে এরিন ও’টুল তদন্ত কমিটির সামনে নিজের বক্তব্য পেশ করেন। সে সময় তিনি অভিযোগ করেছিলেন ভুল তথ্য ছড়ানোর কারণে তার নির্বাচনি প্রচারে প্রভাব পড়েছিল। এর ফলে ২০২১ সালের নির্বাচনে তার দল প্রায় ৯টি আসন হারিয়েছে।

প্রসঙ্গত, এই নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল।

গোয়েন্দা সংস্থা সিএসআইএস তাদের প্রতিবেদনে দাবি করেছে, কানাডার নির্বাচনে ভারত এবং পাকিস্তান হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছে।

ভারতের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগে দাবি করা হয়েছে ভারত সরকারের এক ‘প্রক্সি এজেন্ট’ সমস্ত কর্মকাণ্ডকে বাস্তবায়িত করেছে। 'কয়েকটি নির্বাচনি এলাকায়' ভারতপন্থী প্রার্থীদের সমর্থন করার বিষয়টিও ওই এজেন্টের কাজ ছিল।

হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও। সিএসআইএস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টা সীমিত ছিল এবং এর মূল লক্ষ্য ছিল ‘বিশ্বে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাব হ্রাস করা’।
 
তদন্ত কমিটির সামনে পেশ করা বিবৃতি অনুযায়ী, সিএসআইএস এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা এই অভিযোগগুলি সম্পর্কে জানতেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে জানানো হয়নি। এমন কী যে নেতাদের ‘টার্গেট’ করা হয়েছিল তাদেরও এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়নি।

সিএসআইএ-এর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০১৯ সালের নির্বাচনে চীন থেকে অজ্ঞাত এক প্রার্থীর কর্মীকে প্রায় আড়াই লক্ষ কানাডিয়ান ডলার (১ লক্ষ ৮৪ হাজার মার্কিন ডলার) দেওয়া হয়। এছাড়া হস্তক্ষেপের উদ্দেশ্যে অন্যদেরও অর্থ দেওয়া হয়।

ওই গোয়েন্দা সংস্থার অভিযোগ লিবারেল পার্টির প্রার্থী হান ডংকে সাহায্য করার জন্য ২০১৯ সালে একটি চার্টার্ড বাসে চীনের একটি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আনা হয়েছিল। অভিযোগ, হান ডং যাতে তিনি তার দলের তরফ থেকে প্রার্থী হতে পারেন সেই উদ্দেশ্য নিয়েই এই পদক্ষেপ।

সিএসআইএস দাবি করেছে, ওই শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়া হলেছিল যে ‘হান ডংকে সমর্থন না করলে তাদের স্টুডেন্ট ভিসায় সমস্যা হতে পারে এবং এর ফল ভোগ করতে হতে পারে চীনে বসবাসকারী তাদের পরিবারকে।’

হান ডং এখন একজন নির্দল নেতা। তিনি তার বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তিনি চীনা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং নির্বাচনি প্রচারের সময় তাদের লিবারেল পার্টির সদস্য হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন বটে তবে এই ঘটনায় কোনও ষড়যন্ত্রের কথা অস্বীকার করছেন তিনি।

news