জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আর্কটিক অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ায় নতুন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক পথ খুঁজে পাওয়া গেছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চীন ও রাশিয়া এবার ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নতুনভাবে এগিয়ে নিতে চাইছে।
রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্কটিক অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চেয়েছে। এবার সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে চীন আর্কটিক সাগরপথ ব্যবহার করে ইউরোপে পণ্য পাঠানোর পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে।
২০ সেপ্টেম্বর চীনের ইস্তানবুল ব্রিজ নামের একটি কন্টেইনার জাহাজ নিংবো-ঝৌশান বন্দর থেকে যাত্রা করবে। ১৮ দিনের এই যাত্রায় জাহাজটি রাশিয়ার উত্তর উপকূল দিয়ে আর্কটিক সাগরপথ ধরে যুক্তরাজ্যের ফেলিক্সটো বন্দরে পৌঁছাবে। বরফ-ঢাকা পথ পাড়ি দিতে জাহাজটির সঙ্গে থাকবে একটি বিশেষ ধরনের আইসব্রেকার।
আর্কটিক ইনস্টিটিউটের মাল্টে হ্যাম্পার্ট বলেন, আর্কটিক অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতিকে প্রভাবিত করছে। অঞ্চলটিতে খনিজ সম্পদ এবং নতুন বাণিজ্যিক পথের কারণে আন্তর্জাতিক সমীকরণ বদলাচ্ছে। আর্কটিক সাগরপথ প্রচলিত বাণিজ্যিক পথের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ কম দূরত্বে পণ্য পৌঁছে দিতে সক্ষম, ফলে সময় এবং খরচ দুইই বাঁচবে।
ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক পথগুলোতে সম্প্রতি নানা ধরনের ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা গেছে। হর্ন অফ আফ্রিকার কাছে জলদস্যু হামলা এবং লোহিত সাগরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি অনেক বাণিজ্যিক সংস্থাকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে বাধ্য করছে। এই পরিস্থিতিতে আর্কটিক সাগরপথ নিরাপদ এবং কার্যকর বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবার আর্কটিক অঞ্চলের উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক পণ্য পরিবহনের পরিমাণ ৭০ থেকে ১০০ মিলিয়ন টনে উন্নীত করার লক্ষ্য রেখেছেন। রাশিয়া নিজস্ব পারমাণবিক শক্তিচালিত আইসব্রেকারের মাধ্যমে সারা বছর এই পথে জাহাজ চলাচল নিশ্চিত করতে চায়। মুরমানস্কের মতো পুরোনো বন্দর সম্প্রসারণ ও নতুন বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনাও চলছে।
পুতিন আরও বলেছেন, আর্কটিক অঞ্চলে তেল, গ্যাস, ধাতু এবং অন্যান্য দুর্লভ খনিজের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে। তিনি চীন, ভারত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে যৌথ উদ্যোগে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এই অঞ্চলকে অর্থনৈতিকভাবে আরও গতিশীল করতে তিনি আর্কটিক শহরগুলোর উন্নয়ন এবং পর্যটন সম্প্রসারণেরও ঘোষণা দিয়েছেন।


