বিন সালমানের অবস্থান শক্তিশালী হওয়া ছাড়া আমেরিকার জন্য কোনো সুখবর নেই!

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পশ্চিম এশিয়া সফর এমন এক পরিস্থিতিতে শেষ হয়েছে যেখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ছিল সৌদি আরব এবং এ অঞ্চলের ক্ষমতা কাঠামোতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের অবস্থান পুনরুদ্ধার করা।

সৌদি আরব সফরে জো বাইডেনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানো। যাইহোক উন্নয়নের প্রক্রিয়া সেইসাথে এই সফর থেকে প্রকাশিত ছবি এবং বাইডেন ও সৌদি কর্মকর্তাদের মধ্যে বিশেষ করে মোহাম্মদ বিন সালমানের বৈঠক থেকে দেখা গেছে যে বাইডেনের সফর ওয়াশিংটন-রিয়াদ সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুব বেশি পরিবর্তন ঘটাবে বলে মনে হচ্ছে না।

বাইডেন যখন জেদ্দা বিমানবন্দরে বিমান থেকে নামেন তখন মোহাম্মদ বিন সালমান বিমানবন্দরে বাইডেনকে ব্যক্তিগতভাবে অভ্যর্থনা জানাননি বরং সৌদি আরবের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা তাকে গোলাপ দিয়ে স্বাগত জানান। বিন সালমান আল সালাম প্রাসাদের সামনে বাইডেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এছাড়া বাদশাহ সালমানও সালাম প্যালেসের সামনে না এসে প্রাসাদের ভেতরে মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য অপেক্ষা করেন।

অনেকে ২০১৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সৌদি কর্তৃপক্ষ যেভাবে স্বাগত জানিয়েছিলেন এবং বাইডেনকে তারা যেভাবে স্বাগত  জানিয়েছেন- এই দুইয়ের মধ্যে তুলনা করছেন। ট্রাম্পের সৌদি আরব সফরের সময় সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্পকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানের দরজা পর্যন্ত গিয়েছিলেন এবং এরপর ট্রাম্পের প্রতি আন্তরিকতা দেখাতে সৌদি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তলোয়ার নাচ করেন। এদিকে সৌদি আরব সফর শেষ হওয়ার পরেও বাইডেনের সঙ্গে মক্কা প্রদেশের গভর্নর দেখা করতে গিয়েছিলেন এবং সৌদি রাজা বা যুবরাজ তাকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে যাননি।

আরেকটি বিষয় হল বিন সালমান যখন বৈঠকে সৌদি তেলের উৎপাদন বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন যে আমরা ইতিমধ্যে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছি এবং বলেছিলাম যে আমরা ২০২৭ সালের মধ্যে আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াব। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহানও জেদ্দার বৈঠকে ঘোষণা করেন যে এই বৈঠকে তেল উৎপাদনের বিষয়টি উত্থাপিত হয়নি। তাই এটা বলা যেতে পারে যে সৌদি তেল উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যাপারে  বাইডেন তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারেননি।

জো বাইডেন ইরান সম্পর্কে যদিও "আমরা ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র পেতে দেব না" এই বাক্যাংশটি পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। তবে মোহাম্মদ বিন সালমান আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সাথে ইরানের সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। এছাড়াও, সৌদি যুবরাজ নরম সুরে ঘোষণা করেছেন যে আমরা ইরানকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি এই অঞ্চলের দেশগুলির সাথে সহযোগিতা করার জন্য।

এছাড়াও, জেদ্দার বৈঠকে, ফয়সাল বিন ফারহান সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে আলোচনা ইতিবাচক ছিল বলে জোর দিয়ে আরব ন্যাটো গঠনের দাবি প্রত্যাখ্যান করে ঘোষণা করেন: “আরব ন্যাটো নামের কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। আমি জানি না এই নামটি কোথা থেকে এসেছে। জেদ্দা সম্মেলনে এরকম কোনো কিছু নিয়ে আলোচিত হয়নি।

সৌদি আরবসহ পশ্চিম এশীয় অঞ্চলে বাইডেনের সফরে যদিও তার জন্য উল্লেখযোগ্য অর্জন বয়ে আনে নি তবে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্য তা ছিল একটি সুস্পষ্ট অর্জন। আমেরিকার হাফিংটন পোস্ট ওয়েবসাইট তার প্রতিবেদনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাম্প্রতিক সৌদি আরব সফরের প্রভাব সম্পর্কে লিখেছে: "শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ট্রাম্পের চেয়েও বড় উপহার দিয়েছেন। বাইডেন ক্রাউন প্রিন্সের বাড়িতে বিন সালমানের সাথে উল্লাসের সঙ্গে দুই মুষ্টির ঠোকাঠুকির মাধ্যমে দেখা করেন যা ইতিমধ্যে বিশ্ব মিডিয়ায় খবর তৈরি করেছে। সেই বাড়িতে এমন একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল যেখানে যুবরাজ নিজেকে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন!" যদিও হোয়াইট হাউস এর আগে দাবি করেছিল যে বাইডেন কেবলমাত্র সৌদি আরবের বাদশাহ সালমানের সাথেই যোগাযোগ করেন।খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে

news