রাশিয়াকে নিয়ে পাশ্চাত্যের লেজে-গোবরে অবস্থা! ইউক্রেনকে সমর্থন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ইউরোপ!

রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের অবরোধ আর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে গিয়ে বেশ বেকায়দায় রয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। এসব দেশে বাড়ছে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকট।

অবস্থা এতটাই শোচনীয় হয়ে পড়েছে যে ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দ সামাজিক নানা অসন্তোষ, ধর্মঘট ও বিদ্রোহ নিয়ে ব্যাপক আতঙ্কে রয়েছেন এবং তারা ইউক্রেনকে সাহায্য দেয়া অব্যাহত রাখার বিষয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছেন। 


জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্নালিনা বায়েরবক রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি বন্ধ হয়ে গেলে জার্মানিতে সামাজিক অসন্তোষ দেখা দিতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আমরা যদি গ্যাস টারবাইন না পাই তাহলে বর্ধিত গ্যাস পাবো না, ফলে ইউক্রেনকেও সাহায্য করতে পারব না, কারণ আমাদেরকে তখন গণবিক্ষোভ সামাল দেয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে। 

ইউক্রেনে গত ২৪ ফেব্রুয়ারিতে হামলা শুরু করে রাশিয়া। মার্কিন সরকারসহ পশ্চিমা দেশগুলো এ হামলার জবাবে রাশিয়ার জ্বালানি খাতসহ নানা খাতের ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কিন্তু এসব নিষেধাজ্ঞা রুশ অর্থনীতির ওপর তেমন একটা প্রভাব রাখেনি বরং পশ্চিমা দেশগুলোরই ক্ষতি করছে! এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে গেছে, বেড়ে গেছে জ্বালানির দাম এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর গ্যাস চাহিদা মেটানো নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

রাশিয়ার জ্বালানী খাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকলে ইউরোপের অর্থনীতিতে ও বিশ্বের জ্বালানী বাজারেও আরও ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দিবে বলেও পাশ্চাত্য আশঙ্কা করছে। বিশেষ করে ইউরোপে রুশ তেল ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে সেখানে চলমান মুদ্রাস্ফীতি সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছাবে বলে ইইউ হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

ইউরোপ অন্য কোনো দেশ থেকে গ্যাস আমদানির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে এবং আগামী শীতে গ্যাসের তীব্র চাহিদা মেটানো নিয়ে গভীর উদ্বেগে রয়েছে। জার্মানির গ্যাস সেক্টরের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, রাশিয়ার গ্যাস ছাড়া জার্মানি শীতকালে টিকে থাকতে পারবে না!  

সম্প্রতি নর্ড স্ট্রিম-ওয়ান নামক রাশিয়ার গ্যাস পাইপ লাইনটিকে সংস্কারের জন্য ইউরোপ থেকে দশ দিনের জন্য বিচ্ছিন্ন রাখা হয়। কানাডা থেকে গ্যাস টারবাইন সংগ্রহ করা না পর্যন্ত এই লাইন পুনরায় চালু করারও কোনো গ্যারান্টি দেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে রাশিয়ার গ্যাসপ্রম কোম্পানি। 

বর্তমানে ইউরোপে তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দেয়ায় আলজেরিয়ার মত কোনো কোনো দেশ থেকে গ্যাস ও তেল আনার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তাদের চেষ্টা এ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। রাশিয়ার গ্যাস ও তেলের ওপর নির্ভরতা থেকে মুক্ত হতে তথা নতুন কোনো উৎস হতে তেল গ্যাস আনতে ইউরোপের তিন বা চার বছর সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্ট একটি বড় ইউরোপিয় কোম্পানি খবর দিয়েছে।  

মোট কথা ওয়াশিংটনের উস্কানির মুখে রাশিয়াকে শিক্ষা দিতে গিয়ে ইউরোপের অবস্থা এখন 'ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি' ও চাচা আপন জান বাঁচা'র মত হয়ে পড়েছে। ইউরোপের দেশে দেশে দেখা দিচ্ছে গণ-বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ। ফলে বিপদ এড়াতে ইউরোপের কর্মকর্তারা এখন রাশিয়া- ইউক্রেনের যুদ্ধে কিয়েভের পক্ষ নেয়া থেকে পিছু হটছেন এবং এ সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা ভাবছেন।

অন্যদিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণকামিতা ও ইউরোপীয় জোটের আধিপত্যকামিতার জন্য মূল্য দিতে হচ্ছে ইউক্রেনকে।খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে

news