ইরানে মানবাধিকার হরণ নিয়ে প্রস্তাবে সায় দিল না ভারত, ঘরে-বাইরে জল্পনা

 রাষ্ট্রপুঞ্জের (UN) মানবাধিকার কাউন্সিলে ইরানে মানবাধিকার হরণ (Iran Human rights violation) বিরোধী প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটি থেকে বিরত থাকল ভারত। হিজাব বিরোধী আন্দোলনের মোকাবিলায় সে দেশের শাসকের বিরুদ্ধে মানবাধিকার হরণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। যার আঁচ গিয়ে পড়েছে কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরেও। ইরানের জাতীয় ফুটবল দলও বিদেশের মাটিতে সরকারের দমননীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। এই অবস্থায় ভারতের অবস্থান ঘিরে ঘরে-বাইরে জল্পনা শুরু হয়েছে।

গত সেপ্টেম্বরে মহিলাদের জন্য দেশের নির্ধারিত কঠোর পোশাক বিধি লঙ্ঘনের দায়ে গ্রেপ্তার মাহশা আমিনি (Mahsa Amini) নামের তরুণীর পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর পরে ইরানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ দমনে ইরানি পুলিশ ও সেনার দমনপীড়নে বহু মানুষ নিহত হয়েছেন। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলি এই ঘটনায় রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিলে নালিশ ঠুকেছে। সেখানে একাধিক দেশ ও সংগঠন ইরানে একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম বা তথ্যানুসন্ধান দল পাঠানোর প্রস্তাব আনে। ভোটাভুটিতে ৪৭টি দেশের মধ্যে ২৫টি দেশ ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন পাঠানোর পক্ষে ভোট দিয়েছে। ভোটদানে বিরত থাকে ভারত-সহ ১৬টি দেশ।

ভারতের অবস্থান নিয়ে দেশে-বিদেশে চর্চা শুরু হয়েছে। বিষয়টি সরকারি পর্যায়েও অস্বস্তির কারণ হয়েছে বলে খবর। পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি পর্যন্ত সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এই সংক্রান্ত প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন।

কেন ভারত এই অবস্থান নিল তার সম্ভাব্য তিনটি কারণ নিয়ে বিশেষজ্ঞমহলে চর্চা চলছে। এক, জেনিভায় ভোটাভুটি চলাকালীন ইরানের রাজনৈতিক বিষয়ক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাগেরি কানি দিল্লিতে ছিলেন।

দুই, হিজাব নিয়েই কর্নাটকে বিপরীত দাবিতে আন্দোলন চলছে। কর্নাটক সরকার গত মার্চে শিক্ষাঙ্গনে হিজাব নিষিদ্ধ করার পর আন্দোলনের পাশাপাশি আদালতেও লড়াই চলছে। কর্নাটকেও আন্দোলন দমনে মানবাধিকার হরণের অভিযোগ উঠেছে। যদিও ইরানের দমনপীড়নের সঙ্গে তার তুলনা চলে না। কিন্তু আগামী দিনে কর্নাটকের হিজাব মামলা কোন দিকে মোড় নেবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। ফলে ভারত সরকারকে দেশের অভ্যন্তরে ওই ইস্যুটির বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়েছে।

তিন, দেশে মুসলিমদের প্রতি শাসক দল বিজেপির দৃষ্টিভঙ্গি যাইহোক না কেন, ইসলামিক দুনিয়ার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী সরকার সখ্য বজায় রেখে চলছে। ইসলামের নবি মহম্মদ সম্পর্কে বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র নূপুর শর্মার অবমাননাকর মন্তব্যের বিরুদ্ধে আরব দুনিয়া প্রতিবাদে মুখর হতেই বিজেপি তাঁকে বরখাস্ত করে। একই কারণে চিনে উইঘুর মুসলিমদের মানবাধিকার হরণের ঘটনায় ভারত তীব্র নিন্দা করেছে। আরব দুনিয়ায় চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তিত ভারত। আরব দুনিয়াকে বন্ধুত্বের বার্তা দিতেই এই কৌশল নিয়েছে নয়া দিল্লি, মনে করে কূটনৈতিক মহল।
খবর দ্য ওয়ালের /এনবিএস/২০২২/একে

news