ঢাকা, রবিবার, ফেব্রুয়ারী ১৬, ২০২৫ | ৪ ফাল্গুন ১৪৩১
Logo
logo

পাকিস্তানকে পছন্দ-অপছন্দ ৫৯-২৮.৫, ভারতকে পছন্দ-অপছন্দ ৫৩.৬-৪১.৩ 


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৭:১২ পিএম

পাকিস্তানকে পছন্দ-অপছন্দ ৫৯-২৮.৫, ভারতকে পছন্দ-অপছন্দ ৫৩.৬-৪১.৩ 


বাংলাদেশের ৫৩.৬ শতাংশ মানুষ ভারতকে পছন্দ করেন আর দেশ হিসেবে ভারতকে অপছন্দ করেন ৪১.৩ শতাংশ বাংলাদেশি। ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলার এক জনমত জরিপে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
জরিপটির ফলাফল থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে, এবং দেশের মানুষ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী দেশ সম্পর্কে ভাল ধারনা পোষণ করেন।

জরিপে ১,০০০ উত্তরদাতাকে কয়েকটি নির্দিষ্ট দেশকে ১ থেকে ৫ স্কেলে ‘ভোট’ দিয়ে তাদের মতামত জানাতে বলা হয়। স্কেলের ১ এবং ২ মিলে হয় ‘পছন্দ’ আর ৪ এবং ৫ মিলে ‘অপছন্দ। উত্তরদাতাদের ৫৯ শতাংশ পাকিস্তানকে ‘পছন্দ’ স্কেলে বাছাই করেন। অন্যদিকে, ভারতের ‘পছন্দ’ স্কোর ছিল ৫৩.৬ শতাংশ।

তবে দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই চরম প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ দুটোর মধ্যে ‘অপছন্দ’ স্কেলে বেশ বড় ব্যবধান লক্ষ্য করা যায়। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, উত্তরদাতাদের ২৮.৫ শতাংশ পাকিস্তানকে ‘অপছন্দ’ করে মত দেন। অন্যদিকে, ভারতের ‘অপছন্দ’ স্কোর ছিল ৪১.৩ শতাংশ। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশিদের সবচেয়ে ‘অপছন্দ’ হচ্ছে মিয়ানমার, যা আগে বার্মা নামে পরিচিত ছিল। উত্তরদাতারা মিয়ানমারকে ‘অপছন্দ’ স্কেলে ৫৯.১ শতাংশ এবং ‘পছন্দ’ স্কেলে ২৪.৫ শতাংশ রায় দেয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচারের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। অন্যান্য বাছাই করা দেশের মধ্যে, ‘পছন্দ’ স্কেলে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি ভোট পায় (৬৮.৪ শতাংশ), যদিও চীন (৬৬ শতাংশ), রাশিয়া (৬৪ শতাংশ) এবং যুক্তরাজ্য (৬২.৭ শতাংশ) বেশি দূরে ছিল না।

জরিপটি ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলার এডিটোরিয়াল নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনা করে গবেষণা ও জরিপ প্রতিষ্ঠান ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড। ভয়েস অফ আমেরিকার ঠিক করে দেয়া সুনির্দিষ্ট (ক্লোজ এন্ড) প্রশ্নমালার উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার এসিস্টেড টেলিফোন ইন্টারভিউইং এর মাধ্যমে দেশের আটটি বিভাগে ১৮ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সী এক হাজার মানুষের মধ্যে জরিপটি পরিচালিত হয়।

বাংলাদেশের জনতত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্য রেখে জরিপের ১,০০০ উত্তরদাতা বাছাই করা হয়। সেখানে সমান সংখ্যার নারী এবং পুরুষ ছিলেন, যাদের মধ্যে ৯২.৭ শতাংশ ছিলেন মুসলিম। উত্তরদাতাদের অর্ধেকের একটু বেশি ছিল ৩৪ বছর বয়সের নিচে এবং প্রায় এক-চতুর্থাংশ শহুরে মানুষ।

নারী ও পুরুষের মনোভাব
পুরুষ উত্তরদাতাদের মধ্যে ভারতকে ‘পছন্দ’ করেন ৫২ শতাংশ, অন্যদিকে ৬৪.৪ শতাংশ পুরুষ পাকিস্তানকে ‘পছন্দ’ করেন। তবে নারী উত্তরদাতাদের মধ্যে ৫৫.৩ শতাংশ ভারতকে ‘পছন্দ’ করেন আর ৫৩.২ শতাংশ পাকিস্তানের ‘পছন্দ’ স্কেলে রায় দেন।

নারী ও পুরুষের মধ্যে ভারতকে ‘অপছন্দ’ করার মাত্রা প্রায় সমান ছিল (যথাক্রমে ৪০.৪ এবং ৪২.৩ শতাংশ) অন্যদিকে, পাকিস্তানকে ‘অপছন্দ’ করার মাত্রা নারী ও পুরুষ উত্তরদাতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল (যথাক্রমে ৩০.২ এবং ২৬.৭ শতাংশ)।

শহুরে এবং মফস্বলের উত্তরদাতাদের মনোভাবে খুব একটা পার্থক্য বের হয়ে আসেনি। শহুরেদের মধ্যে ৫০.৪ শতাংশ ভারতকে ‘পছন্দ’ স্কেলে রায় দিয়েছেন, আর পাকিস্তানকে দিয়েছেন ৬৩.৯ শতাংশ। অন্যদিকে, মফস্বলের উত্তরদাতাদের ৫৪.৭ শতাংশ ভারতকে ‘পছন্দ’ করেছেন আর পাকিস্তানকে ‘পছন্দ’ করেছেন ৫৭.৩ শতাংশ।
শহুরে এবং মফস্বলের উত্তরদাতারা প্রায় সমানভাবে ভারতকে ‘অপছন্দের’ স্কেলে রায় দিয়েছেন – যথাক্রমে ৪৩.৬ এবং ৪০.৬ শতাংশ। পাকিস্তানকে ‘অপছন্দের’ স্কেলে ২৬.৭ শতাংশ শহুরে এবং ২৮.৯ শতাংশ গ্রামীণ উত্তরদাতা রায় দিয়েছেন।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারত-
সার্বিকভাবে, ভারত এবং পাকিস্তান ‘পছন্দ’ স্কেলে প্রায় সমান হলেও, ‘অপছন্দের’ স্কেলে ভারতের পাল্লা বেশি ভারি। এর কারণ হিসেবে অনেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের ভূমিকাকে দায়ী করেন।

গত ৫ অগাস্ট ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে হাসিনা সরকারের পতনের তিন দিন পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী মনোভাব বিভিন্ন গোষ্ঠীর কর্মসূচীতে প্রকাশ পাচ্ছে। দেশের গণমাধ্যমেও আগের তুলনায় বেশি ভারত-বিরোধী বক্তব্য স্থান পাচ্ছে।

ড. ইউনূস ভারত সম্পর্কে বাংলদেশের বৈরী মনোভাবের কারণ নিয়ে একাধিকবার আলোচনা করেছেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধান সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন দিল্লির সাথে ঢাকার সম্পর্ক এখন ‘নি¤œ পর্যায়ে’ পৌঁছেছে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দিল্লির ভূমিকা ভারতের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব রেখেছে বলে ধারণা করা হয়। ফাইল ফটো।

তিনি অভিযোগ করেন যে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কে ভারত শুধু একটি দল, আওয়ামী লীগের উপর নির্ভর করেছে।
পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ যখন ভারতের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ককে মূল্য দেয়, তেমনি নয়াদিল্লিকেও অবশ্যই আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সব রাজনৈতিক দলকে ইসলামপন্থী হিসেবে চিত্রিত করা এবং শেখ হাসিনা ছাড়া দেশ আফগানিস্তানে পরিণত হবে এমন বক্তব্য পরিহার করতে হবে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায় মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের ইচ্ছা প্রকাশ করলেও জোর দিয়ে বলেন, দিল্লিকে অবশ্যই এই বক্তব্য পরিত্যাগ করতে হবে যে, কেবল হাসিনার নেতৃত্বই দেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।

ভারতকে এই আখ্যান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে যে, সবাই ইসলামপন্থী। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ইসলামপন্থী, আর বাকি সবাই ইসলামপন্থী এবং তারা এই দেশকে আফগানিস্তান বানাবে। আর শেখ হাসিনার কাছেই বাংলাদেশ নিরাপদ। ভারত এই গল্পে মুগ্ধ। ভারতকে এই আখ্যান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্য যেকোনো দেশের মতো বাংলাদেশও আরেকটি প্রতিবেশী,” তিনি বলেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে ভারতের উদ্বেগকে তিনি নাকচ করে দিয়ে বলেন, এটি একটি অজুহাত মাত্র। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের অবস্থা এত বড় আকারে তুলে ধরার চেষ্টা একটা অজুহাত মাত্র।