ঢাকা, রবিবার, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫ | ৫ আশ্বিন ১৪৩২
Logo
logo

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে অহিংস প্রতিরোধ ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নিয়ে গভীর আলোচনা


প্রেস বিজ্ঞপ্তি   প্রকাশিত:  ২৩ জুলাই, ২০২৫, ০৫:০৭ পিএম

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে অহিংস প্রতিরোধ ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নিয়ে গভীর আলোচনা

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস) এবং পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড সোসিওলজি বিভাগ যৌথভাবে 'অহিংস প্রতিরোধ: জুলাই ২০২৪-এ বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ উপায়ে কর্তৃত্ববাদের মোকাবিলা' শীর্ষক এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার আয়োজন করে। গত ২৩ জুলাই ২০২৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে এই পাবলিক লেকচার অনুষ্ঠিত হয়।

সিপিএস-এর পরিচালক ড. এম জসিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় এই আলোচনায় অংশ নেন দেশি-বিদেশি খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ, গবেষক ও বিশ্লেষকরা। তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের গুরুত্ব ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করেন।

ড. জসিম উদ্দিন তার বক্তব্যে ২০২৪ সালের জুলাই মাসের আন্দোলনের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করেন। তিনি বলেন, অনেকেই এই আন্দোলনকে সংঘাতপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করলেও এটি মূলত ছিল শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের একটি উদাহরণ। তিনি গান্ধী, ম্যান্ডেলা ও গাফফার খানের অহিংস আন্দোলনের দর্শন তুলে ধরেন।

পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড সোসিওলজি বিভাগের চেয়ারপারসন ড. রিজওয়ান খায়ের জুলাই আন্দোলনকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসের মাইলফলক হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি শান্তিপূর্ণ নাগরিক আন্দোলনের নৈতিক শক্তির ওপর জোর দেন যা রাষ্ট্রীয় সহিংসতা মোকাবেলায় সক্ষম।

কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ রিজিনার অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ তার বক্তৃতায় অহিংস প্রতিরোধের তিনটি কৌশল উপস্থাপন করেন: সূক্ষ্ম সক্রিয়তা, অহিংস যোগাযোগ এবং শিল্পের মাধ্যমে প্রতিবাদ। তিনি নাগরিক শিক্ষার প্রসারে একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

কোস্টারিকার ইউনিভার্সিটি ফর পিসের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আমর আব্দুল্লাহ অহিংস আন্দোলনের তাত্ত্বিক কাঠামো নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বাংলাদেশের জুলাই আন্দোলন ও মিশরের ২০১১ সালের অভ্যুত্থানের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন। তার মতে, অহিংস প্রতিবাদ দীর্ঘমেয়াদে বেশি কার্যকর প্রমাণিত হয়।

এনএসইউর উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী জুলাই আন্দোলনকে বাংলাদেশের যুবসমাজের সক্রিয়তার উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, "আমরা অবকাঠামো গড়েছি কিন্তু নাগরিক মনন গড়ে তুলতে পারিনি।" তিনি খোলামেলা সংলাপ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চার ওপর জোর দেন।

স্কুল অফ হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেসের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রিজওয়ানুল ইসলাম সমাপনী বক্তব্যে শান্তি ও গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি সকল বক্তা ও অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানান।

এই আলোচনা সভায় উঠে আসে যে, অহিংস প্রতিবাদ কেবল একটি কৌশল নয়, বরং এটি সামাজিক পরিবর্তনের একটি রূপান্তরমূলক পদ্ধতি। বক্তারা একমত হন যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গবেষক ও নাগরিক সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থী ও গবেষকরা অহিংস আন্দোলনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে গভীরভাবে জানার সুযোগ পান। তারা অংশগ্রহণমূলক আলোচনায় নিজেদের মতামত ও প্রশ্ন তুলে ধরেন। আয়োজকরা আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের আলোচনা বাংলাদেশে শান্তি ও গণতান্ত্রিক চর্চাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।