এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট, ২০২৫, ০৩:০৮ পিএম

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাভাষীদের বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে বহিষ্কারের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে সরাসরি আঙুল তুলেই তিনি বলেন, “আমরা প্রত্যেক বাংলাভাষীকে বাংলাদেশি বলে হেনস্তা বা দেশছাড়া করতে দেব না। কেউ যদি এই চেষ্টা করে, আমরা তার জবাব দেব।”
এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুধবার ভোটার তালিকা সংশোধন প্রসঙ্গে বিজেপিকে কড়া হুঁশিয়ারি দেন মমতা। বিখ্যাত চলচ্চিত্র দ্য গডফাদার-এর সংলাপ ঘুরিয়ে তিনি রাজ্যের বাসিন্দাদের উদ্দেশে বলেন, “অন্য নথি ছুড়ে ফেলুন, আধার তুলে নিন।”
আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে আসলে বিতর্কিত জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) চালু করতে চাইছে বলে অভিযোগ তোলেন মমতা। তিনি জনগণকে সতর্ক করে বলেন, “কেউ জরিপ করতে এলে তথ্য দেবেন না। তারা বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আপনার নাম ভোটার তালিকা থেকে কেটে দেবে। নিজের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নাম ঠিক আছে কিনা দেখুন। আধার কার্ড রাখুন, কারণ এটা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।”
মমতার অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গজুড়ে ৫০০টি দল নামিয়েছে, যাদের দায়িত্ব নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ভোটারদের নাম মুছে ফেলা। তিনি আবারও দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “আমরা কোনো বাংলাভাষীকে বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে দেশছাড়া হতে দেব না।”
তিনি আরও দাবি করেন, বিজেপিকে তিনি ‘ললিপপ সরকার’ বলে ডাকেন কারণ তারা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ভয় দেখাচ্ছে। ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার (বিডিও) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের চাকরি কেড়ে নেওয়া বা কারাগারে পাঠানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মমতা কড়া স্বরে বলেন, “নির্বাচন কমিশন আসে যায়, কিন্তু রাজ্য সরকার থেকে যায়।”
তিনি স্পষ্ট করে জানান, “আমি নির্বাচন কমিশনকে সম্মান করি। কিন্তু বড়রা যদি কোনো রাজনৈতিক দলের ললিপপ খায়, সেটা ঠিক নয়। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত কারও ভোটাধিকার কেড়ে নিতে দেব না।”
মানবিকতার প্রসঙ্গ টেনে মমতা আরও বলেন, “আপনারা গরিব মানুষকে বাংলাদেশি বলে অপমান করছেন। অথচ গরিবরা আমার হৃদয়ে আছেন। আমি জাতপাত মানি না, আমি মানবতা মানি।”
এর আগে মমতার ভাতিজা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও সতর্ক করে দেন, “একজন মানুষেরও যদি ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, তাহলে ১০ লাখ বাঙালি দিল্লি অভিমুখে পদযাত্রা করবে।”
বাংলা ভাষাকে ছোট করার অভিযোগে বিজেপির তীব্র সমালোচনা করে মমতা বলেন, “সম্প্রতি দিল্লি পুলিশের এক চিঠিতে বাংলাকে বাংলাদেশের জাতীয় ভাষা বলা হয়েছিল। যদি বাংলা না থাকে, তাহলে জাতীয় সঙ্গীত আর জাতীয় গান কোন ভাষায় লেখা হয়েছিল? স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার অবদান মুছে ফেলতে চাইছে তারা। আমরা ভাষাগত সন্ত্রাস কোনোভাবেই সহ্য করব না।”