ঢাকা, শনিবার, অক্টোবর ২৫, ২০২৫ | ১০ কার্তিক ১৪৩২
Logo
logo

ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে কাঁপছে ভারতীয় কারখানা: লাখো শ্রমিকের চাকরি ঝুঁকিতে, মোদির স্বপ্নেও ধাক্কা


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ৩১ আগস্ট, ২০২৫, ০৮:০৮ পিএম

ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে কাঁপছে ভারতীয় কারখানা: লাখো শ্রমিকের চাকরি ঝুঁকিতে, মোদির স্বপ্নেও ধাক্কা

দুই দশক আগে পশ্চিমবঙ্গের জিনুল আবেদীন পরিবারের ভরণপোষণের স্বপ্নে পাড়ি জমিয়েছিলেন দিল্লিতে। শিখেছিলেন জারদোজি— এক জটিল ও প্রাচীন সূচিকর্ম, যার দক্ষতায় যোগ দেন ওরিয়েন্ট ক্রাফটে। এই কোম্পানি বছরের পর বছর আমেরিকার বড় ব্র্যান্ড— গ্যাপ, রাল্ফ লরেন, আমেরিকান ঈগল— এ পোশাক সরবরাহ করেছে।

কিন্তু এখন সেই কষ্টার্জিত জীবিকা পড়েছে টানাটানিতে। কারণ, হোয়াইট হাউস ঘোষণা করেছে ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০% শুল্ক— যা বস্ত্র, হীরা, ইস্পাত ও অটোমোবাইল রপ্তানির ওপর ভর করে থাকা অসংখ্য ব্যবসা ও শ্রমিককে তীব্র সংকটে ফেলছে।

এই শুল্কের অর্ধেক ট্রাম্পের শাস্তি— ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়া থেকে ভারতীয় তেল আমদানির জবাব। আর বাকি অংশ তাঁর প্রচারিত “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির অংশ, যা মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর উদ্দেশ্যে— ভারতের ক্ষেত্রে যা ২০২৪ সালে দাঁড়িয়েছিল ৪৫.৭ বিলিয়ন ডলার।

এতে সোজা আঘাত পড়ছে নরেন্দ্র মোদির স্বপ্নের “মেক ইন ইন্ডিয়া” প্রকল্পে। ভারতের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার ছিল যুক্তরাষ্ট্র, আর এখন সেই বাজারই টালমাটাল।

‘আমাদের ভবিষ্যৎ শেষ হয়ে যাবে’

ওরিয়েন্ট ক্রাফটে কাজ করা শ্রমিকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। ২২ বছর ধরে কাজ করা নীরজ পান্ডে বলেন, তাঁর মাসে ২০৫ ডলার আয়ে ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা চলছে। নতুন শুল্ক তাঁকে দিশাহারা করে তুলেছে—
“আমরা সবকিছু হারাতে পারি। চাকরি চলে যাবে।”

ঝাড়খণ্ডের সুমিত্রা দেবীর জীবনও বদলে দিয়েছিল এই চাকরি। তিনি বললেন,
“আমার মেয়েরা গর্ব করে বলে, ‘দেখো, মা কাজ করছে।’ কিন্তু যদি চাকরি চলে যায়, ওদের আবার সরকারি স্কুলে ফিরতে হবে।”

কারখানার মালিক সুধীর ধিংরা আশঙ্কা করছেন, ২০ মিলিয়ন টেক্সটাইল শ্রমিক বেকার হতে পারেন। তাঁর মতে, “এই সংকট কোভিডের থেকেও খারাপ।”

হীরা শিল্পও বিপদে

শুধু পোশাক নয়, সুরাটের হীরা শিল্পও কাঁপছে। ভারতের জিডিপির ৭% জোগান দেয় এই খাত, কর্মসংস্থান দেয় ৫০ লক্ষ মানুষকে। জুয়েলারি কাউন্সিলের জয়ন্তীভাই সাভালিয়া সতর্ক করে বলেছেন, “আমেরিকা ভারতীয় হীরার উপর নির্ভরশীল। বড় ধাক্কা এলে চাকরি যাবে, বেতন কমবে।”

মার্কিন চাপ বনাম মোদির অটল অবস্থান

ট্রাম্পের দাবি, উচ্চ শুল্কে মার্কিন শিল্প আবার ফিরে আসবে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে আমেরিকা-ভারত সম্পর্কের ভিত্তি নড়ে যেতে পারে।
ভারতীয় রপ্তানি পোশাক ও গয়না বাজারে প্রতিযোগিতা হারাতে বসেছে ভিয়েতনাম ও চীনের কাছে।

তবুও মোদি পিছু হটছেন না। তিনি ঘোষণা করেছেন—
“কৃষক, জেলে, দুগ্ধচাষীদের স্বার্থে কখনও আপস করব না। ব্যক্তিগতভাবে আমাকে বড় মূল্য দিতে হলেও আমি প্রস্তুত।”

ভারত পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছে— আমদানি শুল্ক কিছুটা শিথিল করছে, নতুন বাজার খুঁজছে দক্ষিণ আমেরিকা ও রাশিয়ায়। কিন্তু শ্রমিকরা বলছেন, এতে তাঁদের দুঃখ ঘুচবে না।

জিনুল আবেদীন ক্ষোভের সুরে বলেন—
“কোম্পানি সমস্যায় পড়লে আমরা পড়ব। দেশ সমস্যায় পড়লে আমরাও শেষ।”