এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:০৯ এএম

ভারতীয় উদ্যোক্তারা এখন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত ৫০% শুল্ক দেশটির কারখানা ও রপ্তানি খাতকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বিশেষ করে টেক্সটাইল, গহনা এবং চিংড়ি রপ্তানিতে নির্ভরশীল উদ্যোক্তারা শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন—কীভাবে টিকে থাকবেন, এমনকি শ্রমিকদের বেতন দেবেন, সেটাই বড় প্রশ্ন।
তিরুপুর, ভারতের অন্যতম বৃহত্তম পোশাক রপ্তানি কেন্দ্র। একসময় যেখানে ১৬ বিলিয়ন ডলারের রেডি-টু-ওয়্যার পোশাক বিদেশে যেত, এখন সেখানে সেলাই মেশিন প্রায় অচল। এন কৃষ্ণমূর্তি নামের এক কারখানা মালিক জানালেন, ক্লায়েন্টরা অর্ডার বন্ধ করে দিয়েছে, সম্প্রসারণ পরিকল্পনা বাতিল হয়েছে, এমনকি ২৫০ জন নতুন নিয়োগকৃত কর্মীকেও ছাঁটাই করতে হয়েছে। আগে বড়দিনের আগে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির অর্ধেক চলে আসত, এখন কারখানাগুলো দেশীয় বাজার ও দীপাবলির আশায় টিকে থাকার চেষ্টা করছে।
শুধু কৃষ্ণমূর্তিই নন, র্যাফট গার্মেন্টসের মালিক শিবা সুব্রামানিয়ামও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার প্রায় ১ মিলিয়ন ডলারের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে আটকে আছে। তিনি বলেন, “যদি এভাবে চলতে থাকে, শ্রমিকদের বেতন কীভাবে দেব?”
পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে কারণ ভারতীয় পণ্য এখন প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছে। একটি ভারতীয় শার্ট যা আগে ১০ ডলারে বিক্রি হত, শুল্কের পর দাম দাঁড়িয়েছে ১৬.৪০ ডলার। অথচ চীনা শার্টের দাম ১৪.২০ ডলার, বাংলাদেশের ১৩.২০ ডলার এবং ভিয়েতনামের মাত্র ১২ ডলার।
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের অজয় শ্রীবাস্তব সতর্ক করে বলেছেন, মার্কিন ক্রেতারা ইতোমধ্যে মেক্সিকো, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের দিকে ঝুঁকছেন।
শুধু পোশাক নয়, রত্ন ও অলংকার শিল্পও ক্ষতির মুখে। মুম্বাইয়ের রপ্তানি অঞ্চলে কোটি কোটি টাকার হীরা পালিশ করা হলেও উদ্যোক্তারা আশঙ্কায় আছেন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে শুল্কের ধাক্কায় বিক্রি ভেঙে পড়বে। ক্রিয়েশন জুয়েলারির মালিক আদিল কোতোয়াল বললেন, “আমরা যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার দিকে তাকাচ্ছি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে যে বাজার গড়ে তুলেছি, কয়েক মাসেই তা ভেঙে পড়তে পারে।”
চিংড়ি খাতও বিপর্যস্ত। শুল্ক ৬০% ছাড়ালে প্রতি কেজিতে ০.৬০-০.৭২ ডলার দাম কমেছে। চাষীরা নতুন করে উৎপাদনে সাহস পাচ্ছেন না। এমএস ভার্মা, এক হ্যাচারি মালিক জানান, আগে যেখানে বছরে ১০০ মিলিয়ন লার্ভা উৎপাদন হতো, এখন ৬০-৭০ মিলিয়নেও রাখা যাচ্ছে না। এতে সরাসরি ৫০ লাখ চাষীর জীবিকা হুমকির মুখে।
ভারতের অর্থনীতির জন্য এ সংকট ভয়াবহ। শ্রমিকরা বাধ্য হচ্ছেন কম মজুরি, ছুটি আর চাকরি হারানোর শঙ্কায় দিন কাটাতে। আর বাণিজ্য আলোচনার অচলাবস্থায় সমাধান আসার কোনো ইঙ্গিত নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতকে এখনই বিকল্প বাজার ও আত্মনির্ভরতার পথে হাঁটতে হবে, নইলে এ সংকট দীর্ঘস্থায়ী হবে।