ঢাকা, রবিবার, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫ | ৬ আশ্বিন ১৪৩২
Logo
logo

পাকিস্তান ও সৌদি আরবের ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি ভারতের কৌশল ও নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৬:০৯ পিএম

পাকিস্তান ও সৌদি আরবের ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি ভারতের কৌশল ও নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ

গত সপ্তাহে পাকিস্তান ও সৌদি আরব একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা ভারতের মতো অঞ্চলের অন্যান্য দেশের জন্য নতুন হিসাব-নিকাশ তৈরি করেছে। সামরিকভাবে এগিয়ে থাকলেও পাকিস্তানের অর্থনীতি সংকটে, আর সৌদি আরব অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হলেও সামরিকভাবে তুলনামূলক দুর্বল।

পাকিস্তান ও সৌদি আরবের সম্পর্ক
উভয় দেশই সুন্নি-মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং ইতিহাসগতভাবে ঘনিষ্ঠ। পাকিস্তানের আর্থিক সংকটের সময়ে সৌদি আরব বহুবার সাহায্য করেছে, বিনিময়ে পাকিস্তান নিরাপত্তা সহযোগিতা দিয়ে আসছে। নতুন চুক্তি এই সহযোগিতাকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে।

চুক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো, দুই দেশের যেকোনো একটির ওপর আক্রমণ হলে অন্য দেশও তা নিজের ওপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য করবে। অর্থাৎ পাকিস্তান বা সৌদি আরবের ওপর হামলা হলে তা দুই দেশের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হবে।

উভয় দেশের স্থল, বিমান ও নৌবাহিনী আরও ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করবে এবং গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান করবে। পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্র-সমৃদ্ধ দেশ হওয়ায় এটি সৌদি আরবের জন্য নিরাপত্তার গ্যারান্টি হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।

বিশেষ করে, গাজার সংঘাত এবং ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই চুক্তি সৌদি আরবের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, "আমাদের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক একটি ঐতিহাসিক মোড় নিচ্ছে, আমরা শত্রুদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ।"

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানি বলেছেন, "সৌদি আরবের অর্থ দিয়ে পাকিস্তান আমেরিকান অস্ত্র কিনতে পারবে।" পাকিস্তানি কূটনীতিক মালিহা লোধি বলেন, "এটি অন্যান্য আরব দেশগুলোর জন্যও দরজা খুলেছে।"

ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ
জম্মু–কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা দেখা দেয়। ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ শুরু করলেও, বিশ্লেষকরা মনে করেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একতরফা পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ভারতকে ভাবতে হবে, সৌদি আরব কি প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে সমর্থন করবে।

অধ্যাপক মুক্তাদির খান বলেন, "ভারতকে নিশ্চিত করতে হবে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার সময় সৌদি আরব সরাসরি সমর্থন দেবে কি না। এছাড়া, লাখ লাখ ভারতীয় যাদের সৌদি আরবে কাজ করেন, তাদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না।"

পাকিস্তানকে আর্থিক সুবিধা ও জ্বালানি নিরাপত্তা
সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের আর্থিক সহায়ক। পাকিস্তানকে ঋণ, তেল কেনায় বিলম্বিত অর্থ প্রদান ও বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে সাহায্য করেছে। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে পাকিস্তানকে কয়েক বিলিয়ন ডলার সরাসরি দিয়েছে। নতুন চুক্তির পর আরও আর্থিক সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

এই চুক্তির ফলে পাকিস্তান জ্বালানি নিরাপত্তায় আরও নির্ভরশীল হবে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে এবং পাকিস্তানকে আঞ্চলিক মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে প্রতিস্থাপন করবে।

আঞ্চলিক প্রভাব
ভারত–পাকিস্তান সম্পর্ক সবসময়ই উত্তেজনাপূর্ণ। পাকিস্তান–সৌদি চুক্তির ফলে পাকিস্তান মধ্যপ্রাচ্যে একটি গুরুতর শক্তি হিসেবে পুনরায় প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, অন্যান্য আরব দেশগুলোও এই চুক্তির অংশ হতে পারে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই চুক্তি পাকিস্তানকে কেবল নিরাপত্তা ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে শক্তিশালী করবে না, বরং আঞ্চলিক কূটনৈতিক ও সামরিক প্রভাবও বাড়াবে।