এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০১:০৯ পিএম
একজন প্রখ্যাত ফিলিস্তিনি বিশ্লেষক আবদেল বারী আতওয়ান মনে করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন গাজা পরিকল্পনা আসলে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা থেকে রক্ষা করার পুরনো প্রতারণার পুনরাবৃত্তি। তাঁর মতে, এতে গাজার মানুষের জন্য কোনো প্রকৃত সমাধান নেই, বরং এটি ইহুদিবাদী দখলদার সরকারের জন্য একটি ঢাল মাত্র।
পার্স টুডে এবং তাসনিম নিউজ এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, লন্ডনভিত্তিক ট্রান্স-রিজিওনাল দৈনিক রাই আল-ইয়ুমের সম্পাদক আতওয়ান একটি নিবন্ধে লেখেন, নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ট্রাম্প আটজন আরব ও ইসলামি নেতা-কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন। উদ্দেশ্য ছিল একটি ২১ দফা পরিকল্পনা অনুমোদন করানো, যা নিয়ে আগের ২৩ মাস ধরে আলোচনায় কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
আতওয়ান বলেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনায় কয়েকটি দিক তুলে ধরা হয়েছে—
সব ইহুদিবাদী বন্দীর একযোগে মুক্তি
স্থায়ী যুদ্ধবিরতি
গাজা থেকে ধাপে ধাপে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার
হামাস ছাড়া গাজার জন্য নতুন সরকার গঠন
পুনর্গঠনের খরচ ইসলামী দেশগুলো বহন করবে, যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপ নয়
কিন্তু তাঁর দাবি, এ ধরনের উদ্যোগ আগে বহুবার দেখা গেছে। ইসরায়েল ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে, তারপর অন্যদের অর্থ দিয়ে পুনর্গঠন হবে—যেমনটি লেবাননে ঘটেছিল। এই পরিকল্পনায় কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নেই, এমনকি পশ্চিমা বিশ্বের প্রচারিত দুই-রাষ্ট্র সমাধান নিয়েও কোনো আলোচনা হয়নি।
আতওয়ানের মতে, এই প্রকল্প মোটেও ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সহানুভূতি থেকে তৈরি হয়নি। এটি গাজার বিরুদ্ধে গণহত্যা বন্ধ করতে নয়, বরং ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক চাপ থেকে বাঁচাতে বানানো হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়েই বিশ্বে ইসরায়েলকে ঘিরে বিরোধিতা দ্রুত বেড়েছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যে টনি ব্লেয়ার ইরাক যুদ্ধের স্থপতি ছিলেন, তাঁর হাতে রক্ত লেগে আছে—তাঁর তৈরি পরিকল্পনার ওপর কীভাবে বিশ্বাস করা যায়?”
আতওয়ান আরও বলেন, ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার—যিনি “শতাব্দীর চুক্তি”র মূল কারিগর—এই পরিকল্পনার অন্যতম প্রযোজক। কুশনার ইসলামী দেশগুলোকে শুধু রিয়েল এস্টেট প্রকল্পের অংশীদার হিসেবে দেখেন। এ ছাড়া পরিকল্পনার তত্ত্বাবধানে আছেন ইসরায়েলের কৌশলগত মন্ত্রী রন ডার্মার, যিনি নেতানিয়াহুর সবচেয়ে উগ্র পরামর্শদাতা হিসেবে পরিচিত।
আতওয়ান অভিযোগ করেন, মুসলিম নেতারা এখনও ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর পুরনো প্রতারণা থেকে শিক্ষা নিচ্ছেন না। যদি ট্রাম্প সত্যিই গাজা যুদ্ধ বন্ধে আন্তরিক হতেন, তবে প্রথম পদক্ষেপ হতো ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধ করা। কিন্তু তিনি সে পথে হাঁটেননি।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, মুসলিম নেতারা অন্তত সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন, যেদিন ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর মধ্যে হোয়াইট হাউসে বৈঠক হওয়ার কথা। কিন্তু তাদের তাড়াহুড়ো প্রমাণ করে, তারা ট্রাম্পের কপটতা এবং নেতানিয়াহুর আসল নিয়ন্ত্রণ শক্তি বোঝেননি। আতওয়ানের মতে, এখন আমেরিকায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন নেতানিয়াহুই।