এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০১:০৯ পিএম
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বক্তৃতা দিয়ে স্পষ্ট জানালেন—রাশিয়ার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বা ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে আক্রমণের কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, মস্কোর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আগ্রাসন হলে তার “চূড়ান্ত জবাব” দেওয়া হবে।
শনিবারের বক্তৃতায় ল্যাভরভ অভিযোগ করেন, পশ্চিমা দেশগুলো এখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগের হুমকি “ক্রমশ সাধারণ” করে তুলছে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবারই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবুও রাশিয়ার বিরুদ্ধে উসকানিমূলক মন্তব্য চলছেই।
ল্যাভরভ সরাসরি ইসরায়েলকেও সমালোচনা করেন। তাঁর মতে, ৭ অক্টোবর ২০২৩ হামাসের হামলার নিন্দা জানালেও, গাজায় ফিলিস্তিনিদের “নৃশংস হত্যাযজ্ঞ” কিংবা পশ্চিম তীর দখল করার কোনো ন্যায্যতা নেই।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬৫,৯২৬ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে ৭ অক্টোবর হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল।
রাশিয়ার শীর্ষ কূটনীতিক বলেন, ইসরায়েল হামাস দমনের অজুহাত তুলে কাতারসহ বিভিন্ন মধ্যপ্রাচ্যের দেশে বিমান হামলা চালাচ্ছে। এসব আগ্রাসন পুরো অঞ্চলকে আরও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
ইরানের প্রসঙ্গে ল্যাভরভ জানান, পশ্চিমা শক্তিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে কূটনীতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। সম্প্রতি রাশিয়া ও চীনের নেতৃত্বে নিষেধাজ্ঞা ঠেকানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তাঁর মতে, রবিবার থেকে কার্যকর হওয়া নতুন এই নিষেধাজ্ঞাগুলো সম্পূর্ণ “অবৈধ”।
ডেনমার্কের আকাশসীমায় ড্রোন উড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে মস্কো দায় অস্বীকার করেছে। ডেনমার্কও বলেছে, এটি সম্ভবত কোনো “পেশাদার ব্যক্তি”র কাজ, তবে রাশিয়ার সম্পৃক্ততার প্রমাণ নেই।
একই সময়ে, এস্তোনিয়া রাশিয়ার যুদ্ধবিমান দিয়ে আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে। আর পোল্যান্ডের আকাশে ড্রোন অনুপ্রবেশের ঘটনায় ন্যাটো জরুরি বিমান প্রতিরক্ষা মিশন চালিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ন্যাটো দেশগুলো চাইলে তাদের আকাশে ঢুকে পড়া রাশিয়ান বিমান ভূপাতিত করতে পারে। অন্যদিকে ন্যাটো জানিয়েছে, ভবিষ্যতে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে তারা প্রয়োজনে “সামরিক ও অসামরিক সব সরঞ্জাম” ব্যবহার করবে।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্প সাম্প্রতিক মন্তব্যে নতুন অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কিয়েভের উচিত পুরো ইউক্রেনকে তার “আসল অবস্থায় ফিরিয়ে আনা”।
ল্যাভরভ নিজের বক্তব্যে বলেন, বর্তমান মার্কিন প্রশাসন ইউক্রেন সংকট সমাধানে কোনো বাস্তব ইচ্ছা দেখাচ্ছে না। বরং তারা শুধু আদর্শিক অবস্থান ধরে রাখছে, যা সম্পর্ক উন্নতিতে বাধা দিচ্ছে।
বক্তৃতার একপর্যায়ে ল্যাভরভ যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনা করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এত দেরি করে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার মানে কি তারা ভেবেছিল, “তখন আর কাউকে বাঁচানো যাবে না এবং স্বীকৃতি দেওয়ার মতো কেউ থাকবে না”?