এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৮:০৯ পিএম
আজ মহাঅষ্টমী। সকাল থেকেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে কলকাতার মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড় জমিয়েছেন পূণ্যার্থীরা। খালি পেটে স্নান সেরে হাতে ফুল নিয়ে পুষ্পাঞ্জলি দিতে হাজির হয়েছেন হাজারো ভক্ত। বারোয়ারি থেকে বনেদি বাড়ি—সব জায়গায় চলছে মহাঅষ্টমীর বিশেষ আয়োজন।
শুধু কলকাতাই নয়, বেলুড় মঠ, তারাপীঠ, দক্ষিণেশ্বরসহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে চলছে কুমারী পূজা। রামকৃষ্ণ মঠ ও বনেদি বাড়িগুলোতেও চলছে ভোগ ও পূজার বিশেষ ব্যবস্থা। এর পরই হবে সন্ধিপূজা।
বিশুদ্ধ পঞ্জিকা অনুযায়ী, আজ সন্ধ্যা ৫টা ৪৩ মিনিট থেকে ৬টা ৭ মিনিট পর্যন্ত চলবে সন্ধি পূজা। তবে গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে দুপুর ১টা ৪৪ মিনিট থেকে ২টা ৮ মিনিটের মধ্যে শেষ হবে পূজা। অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট এবং নবমীর প্রথম ২৪ মিনিট মিলিয়ে মোট ৪৮ মিনিট ধরে চলে এই পূজা। এ সময় দেবী দুর্গাকে চামুণ্ডা রূপে পূজা করা হয়, যিনি পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে চণ্ড ও মুণ্ডকে বধ করেছিলেন।
পুরাণে বলা আছে, অষ্টমীতেই দেবতারা দেবী দুর্গাকে অস্ত্র, রত্নহার ও পদ্মমালা দিয়ে সাজিয়ে তুলেছিলেন। তাই এই দিনে ভক্তদের উৎসাহও থাকে বেশি। বিশ্বাস করা হয়, অষ্টমীতে সঠিক নিয়মে পূজা দিলে জীবনে বাধা দূর হয়, আর্থিক স্থিতি মজবুত হয় এবং কর্মজীবনে সাফল্য আসে।
অষ্টমীর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ নিঃসন্দেহে কুমারী পূজা। তারাপীঠে সেবাইত গোলক মহারাজের উদ্যোগে আয়োজিত এই পূজায় মা তারাকেই দুর্গারূপে পূজা করা হয়। এখানকার বিশ্বাস অনুযায়ী মা তারা সব দেবীর ঊর্ধ্বে, তাই আলাদা কোনো মূর্তির পূজার চল নেই।
তবে বেলুড় মঠের কুমারী পূজার মাহাত্ম্য আলাদা। ১৯০১ সালে স্বামী বিবেকানন্দ মা সারদার উপস্থিতিতে প্রথম শুরু করেন এই পূজা। তখন থেকে চলে আসছে এই রীতি। গায়ে লাল বেনারসি শাড়ি, কপালে চন্দন, হাতে পদ্মফুল আর ছোট্ট মুখে মিষ্টি হাসি—এইভাবেই সেজে ওঠেন কুমারী দেবী। এবারের কুমারী হিসেবে পূজিত হয়েছেন কোন্নগরের বাসিন্দা ৫ বছর ২ মাস বয়সী শ্রীনিকা মুখোপাধ্যায়।
কলকাতার প্রতিটি পূজামণ্ডপ আজ তাই শুধু ভক্তিময় পরিবেশেই ভরপুর নয়, ঐতিহ্য, ইতিহাস আর আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্যের এক অনন্য মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।