ঢাকা, বুধবার, অক্টোবর ১, ২০২৫ | ১৫ আশ্বিন ১৪৩২
Logo
logo

ট্রাম্পের ২০ দফা গাজা পরিকল্পনা: শান্তি কি আসবে, নাকি নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা ঝুঁকিতে?


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৯:০৯ পিএম

ট্রাম্পের ২০ দফা গাজা পরিকল্পনা: শান্তি কি আসবে, নাকি নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা ঝুঁকিতে?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ শেষ এবং বন্দি সব ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তির জন্য ২০ দফা সম্বলিত একটি নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পেশ করেছেন। এই পরিকল্পনায় যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার প্রশাসন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো, ট্রাম্প নিজেই গাজার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন এবং হামাসকে অস্ত্র সমর্পণের শর্তও অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ট্রাম্পের ২০-দফা পরিকল্পনা নিয়ে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরেছে:

গাজার প্রশাসন কে পরিচালনা করবে?
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় যুদ্ধ শেষে গাজার প্রশাসন দেখভাল করার জন্য একটি অরাজনৈতিক ও টেকনোক্র্যাট-ভিত্তিক কমিটি গঠন করা হবে। নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত এই কমিটিই কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ট্রাম্প নিজেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হবেন এবং যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে সহযোগী হিসেবে নাম প্রস্তাব করেছেন। তাঁরা মিলে ‘বোর্ড অব পিস’ নামের একটি কমিটি গঠন করবেন। নতুন সরকারের কর্মকর্তারা সকলেই ট্রাম্প ও ব্লেয়ারের অনুমোদন নিয়ে দায়িত্ব নেবেন।

গাজার ক্ষমতা মূলত কার হাতে থাকবে?
ট্রাম্পের লক্ষ্য হলো পশ্চিম তীরে ক্ষমতাসীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। তবে শর্ত হলো—পিএ-কে অবশ্যই অভ্যন্তরীণ সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে এবং গাজার প্রশাসন সুরক্ষিত ও কার্যকরভাবে পরিচালনা করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এই শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্ষমতা ‘বোর্ড অব পিস’-এর হাতে থাকবে। কিন্তু শর্ত পূরণের কোনো সময়সীমা উল্লেখ করা হয়নি।

গাজাকে কি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হচ্ছে?
জাতিসংঘের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বিপরীতে, ট্রাম্পের প্রস্তাবে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে গাজাকে একটি স্বতন্ত্র ভূখণ্ড হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গাজা যে পুরো ফিলিস্তিনের অংশ, তা প্রস্তাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। হোয়াইট হাউস সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুও বলেছেন, গাজা হামাস বা পিএ-র শাসনের অধীনে থাকবে না।

গাজার নিরাপত্তার ব্যবস্থা কী?
ট্রাম্প একটি অস্থায়ী সেনাবাহিনী গঠনের কথা বলেছেন, যা বিভিন্ন দেশের সেনাদের সমন্বয়ে গঠিত হবে এবং গাজার নিরাপত্তা দেখবে। তবে কোন দেশ সেনা পাঠাবে বা কোন দেশকে বিবেচনা করা হবে—এ বিষয়গুলো স্পষ্ট নয়।

 ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার কবে?
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ২২ ডিসেম্বর নিউইয়র্কে বৈশ্বিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল বয়কট করেছিল। ট্রাম্প সেই পদক্ষেপকে ‘বোকামিপূর্ণ’ বলেছেন। প্রস্তাবে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কথা বলা হলেও সময়সীমা নির্দিষ্ট করা হয়নি। ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারও নির্ভর করবে গাজার পরিস্থিতি, মাইলফলক ও সময়সীমার ওপর।

এই প্রশ্নগুলোই আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে, যেখানে গাজার ভবিষ্যৎ, নিরাপত্তা ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা নিয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।