এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ০১ অক্টোবর, ২০২৫, ০৩:১০ পিএম
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন**। পাঁচ বছর আগে কাবুল থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের একটি চুক্তির পর ঘাঁটি তালেবানদের হাতে চলে গিয়েছিল। ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন,“আমরা এটি বিনামূল্যে দিয়েছি, এখন এটি ফেরত চাই।
১৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, মার্কিন সরকার বাগরাম ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ২০ সেপ্টেম্বর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে তিনি হুমকিস্বরূপ লিখেছেন, “যদি আফগানিস্তান বাগরাম বিমানঘাঁটি ফিরিয়ে না দেয়, তাহলে খারাপ কিছু ঘটবে!” তবে তালেবান এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে
বাগরাম বিমানঘাঁটি আফগানিস্তানের কাবুলের ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এবং দুইটি কংক্রিট রানওয়ে রয়েছে—৩.৬ কিমি ও ৩ কিমি দীর্ঘ। ১৯৫০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন* প্রথম এটি তৈরি করেছিল। ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত আক্রমণের সময় এটি তাদের দায়িত্বে ছিল, পরে নর্দার্ন অ্যালায়েন্স ও তালেবানদের হাতে নিয়ন্ত্রণ যায়।
২০০১ সালে ন্যাটো আক্রমণের পর মার্কিন বাহিনী এটি কৌশলগত কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তর করে, এবং ২০০৯ সালে ঘাঁটিতে প্রায় ১০,০০০ জন থাকত। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সদস্যরা ঘাঁটি ভাগাভাগি করে ব্যবহার করত। এখানে **কারাগার, হাসপাতাল, সৈন্যদের ব্যারাক, এবং পিৎজা হাট ও সাবওয়ের মতো মার্কিন রেস্তোরাঁ ছিল।
২০২১ সালের আগস্টে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময় ঘাঁটি ও সরঞ্জাম খালি করা হয়, তালেবানরা অবশিষ্ট সামগ্রী লুট করে নেয়।
ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, মার্কিন সেনাদের দ্রুত প্রত্যাহারের সময় বড় অস্ত্র তালেবানের হাতে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘাঁটির মূল আকর্ষণ সামরিক সরঞ্জাম নয়, বরং ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব ও মার্কিন নিয়ন্ত্রণ প্রদর্শন।
ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক ইব্রাহিম বাহিস বলেন, “সোভিয়েত ইউনিয়ন নির্মাণের পর থেকে বাগরাম সর্বদা কৌশলগত মূল্যের অধিকারী।” আফগানিস্তানের পাহাড়ি ভূখণ্ডে বড় বিমান ও অস্ত্রবাহী জাহাজ অবতরণ কঠিন হওয়ায় বাগরাম **একমাত্র বড় বিমানঘাঁটি হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ।**
এর নিরাপত্তা বিশ্লেষক হেকমতুল্লাহ আজমি বলেন, ২০০১ সালের পর বাগরাম যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করেছে। তবে, বেসামরিক হতাহতের ঘটনা যেমন ২০১৫ সালে কুন্দুজের হাসপাতালে বোমা হামলা এর নিন্দনীয় ইতিহাসও জড়িয়ে আছে।
তালেবানদের অস্বীকৃতি ট্রাম্পকে এখনো নিরুৎসাহিত করেনি। বিশ্লেষকরা মনে করেন, **আমেরিকা বাগরামের দাবিকে দর কষাকষির কৌশল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।** এতে সামরিক সরঞ্জাম ফেরত পাওয়া, ভবিষ্যতে ছোট ও প্রতীকী সুবিধা পাওয়া সম্ভব হতে পারে।
২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী আফগানিস্তানে **৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি অস্ত্র পরিত্যক্ত ছিল**, যা বর্তমানে তালেবানের নিয়ন্ত্রণে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাগরাম ঘাঁটির বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে **আন্তর্জাতিক বৈধতা ও রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের পথও খোলা হতে পারে।*
বাহিস বলেনতালেবানরা কী অফার করতে পারে—বেসরকারি বিনিয়োগ, খনিজ বা সামরিক সম্পদ—দেখার দায় তাদের।**” ট্রাম্প প্রশাসনের কৌশলও তালেবানের এই প্রস্তাবের উপর নির্ভর করবে।