এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ০১ অক্টোবর, ২০২৫, ০৩:১০ পিএম
বাংলাদেশি তরুণদের পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-তে জড়িত থাকার চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে।গত ছয় মাসে পাকিস্তানে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে অন্তত দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আবার, বাংলাদেশের ভেতরেও সন্দেহভাজন দুই তরুণকে আটক করেছে পুলিশ। ফলে প্রশ্ন উঠেছে—বাংলাদেশি তরুণরা কীভাবে পাকিস্তানের টিটিপিতে যোগ দিচ্ছে?
গত শুক্রবার পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে টিটিপির ১৭ জন সদস্য নিহত হন*। নিহতদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের মাদারীপুরের তরুণ ফয়সাল। এর আগে এপ্রিল মাসে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে আরেক বাংলাদেশি, **আহমেদ জুবায়ের ওরফে যুবরাজ অভিযানে নিহত হন।
বাংলাদেশ পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট জুলাই মাসে টিটিপির সঙ্গে সম্পৃক্ত সন্দেহে দুইজনকে আটক করে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের কার্যক্রমের নেতৃত্বে রয়েছেন এক বাংলাদেশি—ইঞ্জিনিয়ার ইমরান হায়দার**, যিনি টিটিপির হয়ে বাংলাদেশে সদস্য সংগ্রহ ও উগ্রবাদ ছড়ানোর কাজ করছেন।
টিটিপি মূলত পাকিস্তানের পাঠান মাদ্রাসার বিভিন্ন সংগঠনের জোট। ২০০৭ সালে বাইতুল্লাহ্ মেহ্সুদের নেতৃত্বে ১৩টি দল একত্র হয়ে সংগঠনটি গড়ে। শুরু থেকেই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বিভক্ত হলেও ২০২০ সালে আবার একত্রিত হয় তারা। সংগঠনটির মূল লক্ষ্য পাকিস্তানে কথিত ইসলামি শাসন’কায়েম করা।
বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তানের সেনা ঘাঁটি, মসজিদ, স্কুল এমনকি বেসামরিক স্থাপনায় ভয়াবহ হামলার দায় টিটিপির বিরুদ্ধে আনা হয়েছে। শুধু পাকিস্তানেই নয়, তারা বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকেও সদস্য রিক্রুট করে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা।
বাংলাদেশ পুলিশের সূত্র জানায়, আটক তরুণরা সাধারণত ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব যান, সেখান থেকে দুবাই হয়ে পাকিস্তান বা আফগানিস্তানে পৌঁছান। সেখানেই টিটিপির নেটওয়ার্ক তাদের কাজে লাগায়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত বছরের অক্টোবরে ঢাকার দুই তরুণ সৌদি আরবে গিয়ে ওমরাহ না করে পাকিস্তানে চলে যান। পরে তাদের একজন আফগানিস্তান গিয়ে নিহত হন, আরেকজন ফিরে এসে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
এমনকি ২০২৩ সালে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট **ইমরান হায়দার ও তার স্ত্রীকে ঢাকার ডেমরা থেকে অস্ত্রসহ আটক করেছিলো। তাকে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া নামের সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেও দাবি করা হয়। এই সংগঠনের সঙ্গে আল-কায়েদার যোগাযোগ রয়েছে, আর আল-কায়েদার সঙ্গে টিটিপির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, **“বাংলাদেশি জঙ্গিদের পাকিস্তান ও আফগানিস্তানভিত্তিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নতুন কিছু নয়। বায়তুল মোকাররম এলাকায় প্রকাশ্যে ব্যানার টাঙিয়ে মুজাহিদ রিক্রুটমেন্টের নজিরও আছে।”
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক সময়ে নিয়ন্ত্রণ কিছুটা কঠোর হলেও, পাকিস্তানে বাংলাদেশি তরুণদের নিহত হওয়ার ঘটনা প্রমাণ করছে—এই নেটওয়ার্ক এখনো সক্রিয়।
পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়মিতভাবে এসব তথ্য বাংলাদেশকে জানাচ্ছে। জুলাইয়ে দুই তরুণকে আটক করার পর বাংলাদেশের পুলিশ আরও বেশ কিছু নামের খোঁজ করছে। মামলার এজাহারে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, **বাংলাদেশ থেকে সদস্য সংগ্রহ, দীক্ষা ও বিদেশে পাঠানোর কাজ ইমরান হায়দার নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে।
পুলিশ বলছে, টিটিপির নেটওয়ার্ক ভেঙে ফেলতে গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে এবং আটক দুই তরুণ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও অভিযান চালানো হচ্ছে।