ঢাকা, বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ২, ২০২৫ | ১৭ আশ্বিন ১৪৩২
Logo
logo

ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবে নেতানিয়াহু দ্বিমুখী সংকটে, গাজা যুদ্ধ শেষ হবে নাকি নতুন জটিলতা?


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ০২ অক্টোবর, ২০২৫, ০২:১০ পিএম

ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবে নেতানিয়াহু দ্বিমুখী সংকটে, গাজা যুদ্ধ শেষ হবে নাকি নতুন জটিলতা?

গাজা যুদ্ধ বন্ধ এবং ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া অঞ্চল পুনর্গঠনের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। এই পরিকল্পনার মূল অংশ এসেছে সরাসরি তার পক্ষ থেকেই।

এই প্রস্তাবকে গতি দিয়েছে জর্ডান, মিশর, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও তুরস্কসহ শীর্ষ আরব ও মুসলিমপ্রধান দেশ। এমনকি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের ধারা থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়েছেন—যা তার পূর্ববর্তী অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত।

ট্রাম্প বলেছেন, হামাসকে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে এই পরিকল্পনা নিয়ে স্পষ্ট জবাব দিতে হবে—“হ্যাঁ অথবা না।” এই প্রস্তাব অনেকটাই জো বাইডেনের আগের উদ্যোগের মতো, যেটি কট্টরপন্থিদের চাপে ভেস্তে যায়।

ট্রাম্পের পরিকল্পনা ও নেতানিয়াহুর সঙ্কট

ট্রাম্পের প্রস্তাবে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণা রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সংস্কারের পর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একটি বিশ্বাসযোগ্য পথ তৈরি হবে। যুক্তরাজ্যসহ একাধিক ইউরোপীয় দেশও এ ধারনার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

কিন্তু নেতানিয়াহুর জন্য এটি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। হোয়াইট হাউসে তিনি ইংরেজিতে ট্রাম্পকে সমর্থন দিলেও ইসরায়েলে ফিরে হিব্রু ভাষায় জনগণকে আশ্বস্ত করেন যে তিনি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে কখনো মেনে নেবেন না।

আন্তর্জাতিক সমর্থন বনাম অভ্যন্তরীণ চাপ

যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় দেশগুলো এই প্রস্তাবকে সমর্থন করলেও ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থিরা এর বিরোধিতা করছে। তারা চায় গাজা ইসরায়েলের সাথে একীভূত হোক এবং ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে সেখানে ইহুদি বসতি গড়ে তোলা হোক।

অন্যদিকে ট্রাম্পের পরিকল্পনা বলছে—কোনো ফিলিস্তিনিকে জোর করে দেশছাড়া করা হবে না। ফলে নেতানিয়াহু একদিকে আন্তর্জাতিক চাপ, আরেকদিকে অভ্যন্তরীণ উগ্র জাতীয়তাবাদীদের রোষের মধ্যে পড়েছেন।

পরিকল্পনার শক্তি ও দুর্বলতা

এই উদ্যোগের শক্তি হলো গতি—ট্রাম্প দ্রুত সমাধান চাচ্ছেন। তবে দুর্বলতা হলো বিস্তারিত কৌশলের অভাব। কীভাবে যুদ্ধবিরতি টিকে থাকবে, তার সুনির্দিষ্ট রূপরেখা নেই।

ইসরায়েলি বিরোধীদল এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছে। কিন্তু নেতানিয়াহুর জোটের ডানপন্থিরা এটিকে ১৯৩৮ সালের মিউনিখ চুক্তির সাথে তুলনা করছে, যা তীব্র বিতর্ক তৈরি করেছে।

অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

ট্রাম্পের প্রস্তাবের পক্ষে আরব ও মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর অবস্থান এক ধরনের আশার আলো দেখাচ্ছে। তারা বলছে, এই পরিকল্পনা ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার, গাজার পুনর্নির্মাণ এবং দুই-রাষ্ট্র সমাধানের পথ তৈরি করবে।

কিন্তু নেতানিয়াহুর দোদুল্যমান অবস্থান এবং কট্টরপন্থিদের চাপের কারণে পরিকল্পনাটি বাস্তবে কার্যকর হবে কি না তা এখনও বড় প্রশ্ন। গাজা যুদ্ধ শেষের পথে এগোবে নাকি নতুন জটিলতায় জড়াবে—এখন সেটিই দেখার অপেক্ষা।