এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ০২ অক্টোবর, ২০২৫, ০৮:১০ পিএম
গাজার অবরোধ ভাঙার শপথ নিয়ে ৪৪টি নৌকা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। কিন্তু উপকূলের কাছেই একের পর এক নৌযান দখল করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৪৪টি নৌকার বহরের প্রায় সবই এখন ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে। কেবল মাত্র চারটি নৌযান এখনো জব্দ হয়নি এবং গাজার পথে অগ্রসর হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে সুমারটাইম-জং ও শিরিন নামের নৌযান দুটি আইনি সহায়তাকারী। এছাড়া মিকেনো প্রথম গাজার জলসীমায় প্রবেশ করতে সক্ষম হয়, আর মেরিনেট এখনো গাজার দিকে রওনা রয়েছে।
এর আগে আলজাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, অন্তত ২১টি নৌকা ইসরায়েল দখল করে আশদোদ বন্দরে নিয়ে গেছে।
এই ফ্লোটিলায় ৪৬ দেশের ৪৯৮ জন মানবাধিকারকর্মী যোগ দেন। তারা গাজায় গণহত্যা বন্ধের বার্তা দিতে এবং ত্রাণ পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে শুরু করলেও ইসরায়েল আন্তর্জাতিক জলসীমায় এসব নৌযান আটক করে।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম আছেন ফ্লোটিলার কনসিয়েন্স নামের নৌকায়। তিনি ফেসবুকে একটি ছবি শেয়ার করে লিখেছেন,
“জাহাজে ওঠার শেষ যাত্রী হওয়ায় ঘুমানোর জায়গা পাইনি। খোলা ডেকেই ঘুমিয়েছিলাম। ঝড় ওঠায় শেষে বের হওয়ার গেটের পাশে ছোট্ট একটি জায়গা খুঁজে পাই। সেখানে শব্দ ও আলো থাকলেও কারাবাসে থাকার অভ্যাসের কারণে গভীর ঘুম দিয়েছিলাম।”
তিনি আরও লিখেছেন,
“বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে শুভকামনা ও প্রার্থনা আসছে। সবার বার্তা ব্যক্তিগতভাবে উত্তর দিতে না পারলেও আমি সঙ্গীদের কাছে তা পৌঁছে দিয়েছি। এতে আমাদের মনোবল আরও দৃঢ় হয়েছে।”
ফ্লোটিলায় অংশ নিয়েছেন সুপরিচিত জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা টুনবার্গও। তাকে ইসরায়েলি বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। দ্য গার্ডিয়ান ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে, যেখানে গ্রেটা ও তার সহযোগীদের দেখা যায়। ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা “নিরাপদে আছেন।”
ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় গাজায় ইতিমধ্যেই ৬৬ হাজার মানুষ নিহত এবং প্রায় দেড় লাখ আহত হয়েছেন। বহু শিশু অনাহারে মারা যাচ্ছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
ইসরায়েলের এ হামলার প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই আর্জেন্টিনা, ইতালি, মালয়েশিয়া, কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলাসহ বহু দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। কলম্বিয়া ইসরায়েলের সব কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেছেন, “ফ্লোটিলার নৌকা জব্দ করা গুরুতর অপরাধ। এটি গাজার মানুষের প্রতি সংহতি ও মানবিক চেতনার বিরুদ্ধে গেছে।” তিনি আরও দাবি করেন, ফ্লোটিলায় থাকা জীবনরক্ষাকারী পণ্য গাজায় পৌঁছাতে দিতে হবে এবং আটক মানবাধিকারকর্মীদের দ্রুত মুক্তি দিতে হবে।
এখন প্রশ্ন একটাই—শেষ পর্যন্ত গাজার অবরোধ ভেঙে কোনো নৌকা পৌঁছাতে পারবে কি না।